রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

নান্দনিক টুপি তৈরির ব্যস্ততা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

নান্দনিক টুপি তৈরির ব্যস্ততা

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাব্দী গ্রামে নারীরা টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধু সাব্দী গ্রাম নয় আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের তৈরি টুপি দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। কাউনিয়ার পার্শ্ববর্তী পীরগাছা উপজেলারও তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের টুপি।

খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, সংসারের যাবতীয় কাজ শেষ করার পর টুপিতে নকশা করেন নারীরা। এতে তাদের বাড়তি আয় হচ্ছে। তা দিয়ে অনেকেই সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। তিস্তা নদীবেষ্টিত কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার কমপক্ষে ৪০ গ্রামের ২৫ হাজারের বেশি নারী এখন টুপিশিল্পের সঙ্গে জড়িত। এখানকার প্রস্তুত একটি টুপি ওমানের বাজারে বাংলাদেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ৩ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকায়। কাউনিয়ার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাব্দি গ্রামে দেখা গেছে, সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে টুপি বানাচ্ছেন নারীরা। কেউ কেউ রান্নার পাশাপাশি করছেন টুপি তৈরি। এই টুপি তৈরি করে একসময়ের অভাব-অনটনে থাকা দরিদ্র নারীদের জীবনমান পাল্টে যাচ্ছে। তাদের অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। তাদের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। অভাব শব্দটি তাদের কাছে এখন অনেক দূরে চলে গেছে। কাউনিয়ার সাহাবাজ গ্রামের তাজ ট্রেডিংয়ের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০০৩ সালের দিকে হাফেজ আউয়াল নামে এক ব্যক্তি কাউনিয়ায় টুপি প্রস্তুত করে ব্যবসা শুরু করেন। এর পর ভোলা থেকে আসা জহির উদ্দিন সাব্দি গ্রামে টুপির ব্যবসা শুরু করেন। শুরুর দিকে কয়েকজন নারী জড়িত থাকলেও ক্রমাগত তা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো শুরু হয়। জাহাঙ্গীর আলম জানান, মেয়েদের মধ্যে তার স্ত্রী আরিফা সুলতানা প্রথমে টুপির কাজ শুরু করেন। আরিফা সুলতানার বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। ছোট বেলা থেকেই সেখানে দেখে দেখে টুপি বানানো শিখেছেন। এখন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা নিজস্ব উদ্যোগে ছোট ছোট কারখানা দিয়েছেন।

এ ছাড়া ২০০২ সালে শহীদবাগ ইউনিয়নের খোর্দ্দ ভূতছড়ার হতদরিদ্র ফরিদ উদ্দিনের স্ত্রী শহিদা বেগম এই গ্রামে প্রথম টুপি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। এ টুপি ঢাকার এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর পছন্দ হলে অর্ডার পান। এর পর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এরপরে ভূতছাড়া, পার্শ্ববর্তী বল্বভবিষু, শিবু, রামচন্ডীপুর, শাহবাজ, বেটুবাড়ী, পূর্বচাঁদঘাট, পশ্চিমচাঁদঘাট, বখসিপাড়াসহ এখন গোটা কাউনিয়া উপজেলা পরিণত হয়েছে টুপির কারখানায়।

কাউনিয়ার সাব্দী গ্রামের টুপির কারিগর মিনারা, কদবানু ও সানজিদা বেগম জানান, একটি টুপির নকশা বুননসহ অন্য কাজ মিলে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। মাসে গড়ে তারা একেকজন ৪-৫টি করে টুপি তৈরি করেন। প্রতিটি টুপিতে নির্দিষ্ট নকশা ও সাইজ অনুযায়ী ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান। মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ওমান এবং কাতারে সবচেয়ে বেশি টুপি রপ্তানি হয়। এ ছাড়াও কুয়েত, কাতার, সৌদি ও বাহরাইনসহ প্রায় ২০টি দেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর