ঈদের আগমুহূর্তেও জমল না ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ সার্ভিস। অন্যান্য বছর শবেকদরের রাতের পর ঢাকা থেকে লঞ্চে গ্রামমুখী মানুষের ঢল নামলেও এবার ফাঁকা লঞ্চগুলো। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের আশঙ্কায় বিগত বছরগুলোতে বিকাল হলেই লঞ্চ নদীবন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য করত প্রশাসন। এবার চিত্র ভিন্ন। গতকাল বিকালে সদরঘাটে বরিশালমুখী সাতটি লঞ্চের ডেকে গড়ে আড়াই শ থেকে ৩০০ যাত্রী দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঈদের সময় ‘সোনার হরিণ খ্যাত’ লঞ্চের কেবিনও ফাঁকা রয়েছে। এতে অনেকটাই হতাশ লঞ্চমালিকরা। পদ্মা সেতুর কারণে স্বল্প সময়ে গন্তব্যে যেতে পারায় এবার নৌপথে যাত্রীদের আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদের আগমুহূর্তে বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলো উভয় প্রান্ত থেকে যাত্রীতে টইটম্বুর থাকত। সাধারণ যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত ডেকের ব্যবস্থা থাকলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিন নিয়ে চলত কাড়াকাড়ি ও কালোবাজারি। অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার আশঙ্কায় নির্ধারিত সময়ের আগেই সদরঘাট থেকে যাত্রীবোঝাই লঞ্চগুলোকে টার্মিনাল ত্যাগ করতে বাধ্য করতেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব আগের বছরগুলোর চিত্র। পদ্মা সেতু চালুর পর পাল্টে গেছে নৌপরিবহনের গতিপ্রকৃতি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম দিকে লঞ্চমালিকদের ধারণা ছিল, সেতু দেখা হয়ে গেলে আবারও লঞ্চে ফিরবেন যাত্রীরা। এ আশায় অব্যাহতভাবে লোকসান দিয়ে লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন তারা। সব শেষ ঈদের সময় যাত্রীদের চাপ বাড়লে আগের লোকসান ঘুচিয়ে কিছু ব্যবসা করারও পরিকল্পনা ছিল মালিকদের। কিন্তু কোনো কিছুতেই লঞ্চ ব্যবসায় ফিরছে না সুদিন।
মঙ্গলবার রাতে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে হাজার যাত্রী বহনে সক্ষম পাঁচটি বড় লঞ্চ। এর মধ্যে সর্বাধিক ৮৩ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় গেছে এমভি পারাবত-১২ লঞ্চ। অন্য লঞ্চেও যাত্রীর চরম খরা ছিল। ওই দিনের ট্রিপে থাকা লঞ্চের কর্মচারীরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শবেকদরের রাতের পর সাধারণত ঈদের ছুটিতে নৌপথে গ্রামে ফেরার ঢল নামে মানুষের। অন্য বছরের চেয়ে যাত্রী কিছুটা কম হবে অনুমান করে গতকাল সদরঘাটে প্রস্তুত রাখা হয় বরিশালমুখী আটটি লঞ্চ। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী না থাকায় এমভি শুভরাজ নামে একটি লঞ্চকে গতকালের ট্রিপ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বিকাল ৫টার দিকেও সব লঞ্চের ডেক ছিল অনেকাংশে ফাঁকা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চের ডেকে গড়ে আড়াই শ থেকে ৩০০ যাত্রী আরোহণ করেছে বলে জানিয়েছেন এমভি পারাবত-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম খান। যাত্রী কম থাকায় আটটি লঞ্চের মধ্যে একটি গতকাল সার্ভিস থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও এমভি অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের মালিক নিজাম উদ্দিন মৃধা গতকাল বিকাল সোয়া ৫টায় বলেন, এখনো কেবিন কিছু খালি আছে। অন্য বছর এই দিন বেলা ১২টা-১টার মধ্যে যেভাবে যাত্রীতে ভরে যেত, এখন সেভাবে যাত্রী নেই। বিকাল ৫টায়ও ডেকের আংশিক এবং কিছু কেবিন খালি রয়েছে, যা বরিশালের লঞ্চ ব্যবসার ইতিহাসে বিরল।’ তার মতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণের বিভিন্ন রুটে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস ছাড়ছে। যাত্রীরা বাসে স্বল্প সময়ে তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে নামতে পারছেন। লঞ্চে সময় লাগছে বেশি। এ জন্য নৌপথে যাত্রীদের আগ্রহ কমে গেছে। ঈদ করতে তারা বাড়ি ফিরছেন সড়কপথে। লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা কিংবা ভোলা- কোনো রুটের লঞ্চেই প্রত্যাশিত যাত্রী নেই। ঢাকার সদরঘাটে বরিশালগামী লঞ্চে যাত্রীর তেমন প্রেশার নেই। সব যাত্রী সড়কপথে বাড়ি ফিরছেন। ঈদের এ সময় লঞ্চ ব্যবসায় প্রাণ ফিরবে বলে ধারণা করা হলেও এক পদ্মা সেতু লঞ্চ ব্যবসার চিত্র পাল্টে দিয়েছে বলে জানান রিন্টু। এ বিষয়ে আরও জানতে ঢাকার সদরঘাটের নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।