শিরোনাম
শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

হালদার উজানে হবে চা চাষ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

হালদার উজানে হবে চা চাষ

তামাক চাষ করা এসব জমিতে চা চাষের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর উজানে দেদার হচ্ছে তামাক চাষ। ফলে তামাকের বর্জ্য ও কীটনাশক মিশ্রিত পানি সরাসরি এ নদীতে পড়ছে। এতে মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে হালদার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ নদীর মৎস্য প্রজননে। সেই সঙ্গে কমছে এ এলাকার জমির উর্বরতা ও সবজি চাষ। রাসায়নিকের প্রভাবে হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য, পানি, জলজপ্রাণী ও পরিবেশ। তবে এবার চা বোর্ড হালদার উজান এলাকা মানিকছড়িতে তামাক চাষ হয় এমন সব জমিতে চা চাষে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে সেখানে চা চাষের সুযোগ হবে। তামাক চাষিদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। জানা গেছে, ১৯ মার্চ চা বোর্ডের ৮৯তম সভায় হালদা নদীর উজানে তামাক চাষ রোধে ওসব জমিতে চা চাষ করা যায় কি না- এমন বিষয় উত্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান। পরে হালদা নদীসংলগ্ন এলাকায় তামাক চাষ রোধে চা চাষের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। যা বাস্তবায়ন করবে চা বোর্ডের উন্নয়ন ও গবেষণা বিভাগ।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘চা বোর্ডের একটি মিটিংয়ে আমি তামাক চাষ প্রতিরোধ করতে চা চাষ করা যায় কি না- তার পরিকল্পনার কথা বলেছি। এতে হালদা নদী বাঁচবে, স্থানীয়দের স্বাস্থ্যও রক্ষা হবে।’ বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় তামাক চাষ হওয়ায় নদীর ক্ষতি হচ্ছে। তাই কোনো ব্যক্তি, সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠান যদি সেখানে চা বাগান করতে চায়, তাহলে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চা বোর্ড সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, চা বোর্ডের উদ্যোগটি হালদা রক্ষায় ইতিবাচক। জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে ‘হালদা নদীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও হালদা উৎসের পোনার বাজার সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়ন ও ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) উদ্যোগ, মানিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় হালদার উজান এলাকায় সবজি চাষ করা হয়। ২০২০ সালের দিকে হালদার উজান মানিকছড়ি অংশে তামাক চাষ শূন্যের কোটায় নেমে আসে। কিন্তু গত মৌসুমে তা ফের শুরু হয়। গত নভেম্বর থেকে মানিকছড়ি এলাকার বড় একটি অংশের চাষিদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে টোব্যাকো কোম্পানি। চলতি মৌসুমে ঘোরখানা, আসাদতলী, কালাপানি, তুলাবিল, ছদুরখীল এলাকায় ৩৫ হেক্টর জমিতে ৩৪ কৃষক তামাক চাষে জড়িয়ে পড়েন। প্রসঙ্গত, তামাক চাষের পর উচ্ছিষ্ট পচা পাতা, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ধোয়া পানি বৃষ্টির সঙ্গে নদীতে গিয়ে পড়ে। একই সঙ্গে তামাক গাছের মূলও নদীতে পড়ে। তীরে চুল্লিতে তামাক পাতা পোড়ানোয় পাতার উচ্ছিষ্ট অংশও নদীতে গিয়ে পড়ে।

তামাকের ক্ষত দেহে : মানিকছড়ি উপজেলার আসাদতলী এলাকার কামাল উদ্দিন। গত বছর তিনি তামাক চাষ শুরু করেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তার পায়ে ক্ষত দেখা দেয়। দেখতে দেখতে পায়ের ক্ষত বেড়ে যায়। দুটি পায়েই দগদগে ক্ষত হয়। কেবল কামাল উদ্দিন নয়। তামাক চাষে জড়িত অনেকের শরীরেই নানা ক্ষত তৈরি হয়। কারও হাতে, কারও পায়ে, বা শরীরের অন্য অংশে। তাছাড়া তামাক চাষিদের মধ্যে বাড়ছে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা, বমিসহ নানা সমস্যা।

পুড়ছে কাঠ : সংশ্লিষ্টরা জানান, ১ একর জমির তামাকের পাতা চুল্লিতে শুকাতে ৭২ ঘণ্টায় প্রয়োজন হয় ৬ টন কাঠ। এসব কাঠ আশপাশের বন থেকেই সংগ্রহ করা হয়। ফলে পুড়ছে কাঠ, উজাড় হচ্ছে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। ঘোরখানা, আসাদতলী, কালাপানি, তুলাবিল, ছদুরখীল এলাকায় ৩৫ হেক্টর জমিতে করা তামাক পাতা বনের কাঠ পুড়িয়ে শুকানো হচ্ছে। এভাবে কাঠ পুড়তে থাকলে আগামীতে বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর