শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

কারাগারে বসে ডাকাত দল গঠন

আলী আজম

মোতালেব হোসেন। পেশায় মাছ ধরার জাল বিক্রেতা। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। তিনি গ্রামের বাড়িতে জাল তৈরি করেন। পরে তা ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকাসহ মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে বিক্রি করেন। ২০ বছর ধরে তিনি এ পেশায়। ৫ মে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর থেকে জাল বিক্রির ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাকার শনিরআখড়া ব্রিজের ওপর পৌঁছে অন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। হঠাৎ পাশে থামে একটি হায়েস মাইক্রোবাস। ওই গাড়ির চালক জিজ্ঞেস করেন, কোথায় যাবেন? জবাব দেওয়ার পর অর্ধেকের কম ভাড়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেয় চালক। সাময়িকভাবে মনে হয়, যাত্রী পাচ্ছে না, এ জন্য হয়তো কম টাকায় নিয়ে যেতে চাইছে। কম ভাড়ার এ প্রস্তাব মূলত একটি ফাঁদ। এ ফাঁদে পা দেন মোতালেব। মাইক্রোবাসে উঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয় তাকে। এরপর দুর্বৃত্তরা মারধর করে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে ফেলে যায় মোতালেবকে। এভাবে কম ভাড়ায় এসব গাড়িতে উঠলেই সর্বনাশ। হাইওয়েতে চলার কিছুক্ষণ পরই বেরিয়ে আসে দুর্বৃত্তদের আসল রূপ। গাড়িতে থাকা সবাই ডাকাত চক্রের সদস্য। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সর্বস্ব লুট করে নেয় তারা। বিভিন্ন মহাসড়কে একের পর এক ডাকাতি করে আসছিল চক্রটি। এক সপ্তাহে ১০-১২টি ডাকাতির পর এ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রতিদিন অন্তত তিনটি করে ডাকাতির উদ্দেশ্যে তারা সড়কে নামত। এ চক্রের মূল হোতা আরিফুল ইসলাম শাহিন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি সাতজনকে নিয়ে গঠন করেন এ ডাকাত দল। জামিনে বেরিয়ে এসে তারা একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে শুরু করেন ডাকাতি। ডিবি বলছে, চলতি মাসে এক সপ্তাহে ১০ থেকে ১২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে চক্রটি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এ চক্রের খপ্পরে পড়া মোতালেবের অভিযোগের ভিত্তিতে তারা গ্রেফতার হন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- দলনেতা শাহিন, তার সহযোগী ইমদাদুল হক মিলন, আলাউদ্দিন, শিমুল শেখ ও বাবু। তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশি অস্ত্র, একটি হায়েস মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১১-৭৫৭৬), লুণ্ঠিত ছয়টি মোবাইল ফোন ও ১০ হাজার টাকা এ সময় উদ্ধার করা হয়। তাদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং মাদক মামলা রয়েছে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, চক্রের মূল হোতা শাহিন রাজধানীর খিলগাঁও থানার ত্রিমোহনীর বাসিন্দা। চাঁদাবাজি মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখানেই তারা পরিকল্পনা করেন জামিনে বেরিয়ে ডাকাতি শুরু করবেন। ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগে জামিনে বের হন শাহিন। পর্যায়ক্রমে জামিন পান অন্য সদস্যরাও।

এদের মধ্যে গ্রেফতার মিলনের গ্রামের বাড়ি নড়াইলে। সেখান থেকে মাসে ৬০ হাজার টাকায় একটি হায়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করেন তারা।

চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের টার্গেট করে কম ভাড়ায় পৌঁছে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। যারা সরল বিশ্বাসে গাড়িতে উঠতেন, মহাসড়কে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সর্বস্ব লুট করে চক্রটি তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখে যেত। যারা মালামাল দিতে চাইতেন না, তাদের গলা চেপে ধরে কিলঘুষি মারা হতো। গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হতো। ৩ মে রাত থেকে চক্রটি ৮ মে পর্যন্ত ১০-১২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এ চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারানো তিনজন ভুক্তভোগী পাওয়া গেছে। তারা বিভিন্ন থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন।

এ চক্রের হাতে সর্বস্ব হারানো জাল বিক্রেতা মো. মোতালেব হোসেন জানান, কম ভাড়ায় গাড়িতে উঠে দেখি সাত-আটজন লোক ভিতরে বসা। আমাকে মাঝামাঝি বসানো হয়। গাড়িটি রায়েরবাগ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে থাকা লোকজন আমার গলা চেপে ধরে মারধর করে পকেটে থাকা ৪৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। মদনপুরে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে তারা পালিয়ে যায়।

ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল আসাদ বলেন, চক্রটি ঢাকা মহানগরী, চিটাগাং রোড, ৩০০ ফিট, গাবতলী রোড ও আশুলিয়া রোডে সক্রিয় ছিল। ১২ মে চক্রের পাঁচ সদস্যকে রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী যাত্রীছাউনি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা কারাগারে আছে। এখনো চক্রের দুই সদস্য পলাতক। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

 

 

সর্বশেষ খবর