শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাবুল মাহমুদুল আশাবাদী আনোয়ার দৃঢ়প্রত্যয়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

বাবুল মাহমুদুল আশাবাদী আনোয়ার দৃঢ়প্রত্যয়ী

ইভিএম নিয়ে শঙ্কা ছিল। ইভিএমে দেওয়া ভোট ভোটারের পছন্দের প্রতীকে গণনা হবে কি না, সেই শঙ্কা প্রকাশ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। নির্বাচনে প্রার্থী হলেও একই শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। কিন্তু গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর ইভিএম নিয়ে কিছুটা শঙ্কা কেটেছে তাদের। গাজীপুরের মতো সিলেটেও নীরব ভোটবিপ্লবের আশা করছেন তারা। জয় নিয়ে দৃঢ় আশাবাদী আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

গত সিটি নির্বাচনে সিলেটের হাতে গোনা কয়েকটি সেন্টারে ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভোট গ্রহণ। এ ছাড়া সিলেটের ভোটাররা এখনো পরিচিত নন ইভিএমের সঙ্গে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন করে সংযুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডের মানুষের কাছে ইভিএম সম্পূর্ণ নতুন ধারণা। তাই তফসিল ঘোষণার পর থেকে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন প্রার্থীরা। ২০ মে রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ ডেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বর্জনের কারণ হিসেবে তিনি ইভিএম পদ্ধতিতে জনরায় বাস্তবে প্রতিফলিত না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ইভিএমে ভোটাররা সঠিকভাবে ভোট দিতে না পারা এবং প্রদেয় ভোট ভোটারের পছন্দের প্রতীকে না পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। ইভিএমকে ভোট চুরির ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে আখ্যা দেন আরিফ। একইভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানও ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে একই শঙ্কা প্রকাশ করেন। শুরুতে ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানালেও পরে অবস্থান পরিবর্তন করেন জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল। ইভিএমে ভোট গ্রহণে ধীরগতি ও ভোটদানের পদ্ধতি ভোটাররা এখনো জানেন না বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। কিন্তু গাজীপুর নির্বাচনের পর কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বাবুল ও মাহমুদুল হাসানের। তারা মনে করছেন সরকার হস্তক্ষেপ না করলে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটাররা সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এ ছাড়া সরকার তথা নৌকার বিপক্ষে নীরব ভোটবিপ্লবেরও স্বপ্ন দেখছেন তারা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘ভোটাররা ইভিএম সম্পর্কে অজ্ঞ। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল ছয় মাস আগে থেকে ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। কিন্তু তারা তা করেনি। ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে অনেক সময় ভোটারদের আঙুলের ছাপ মিলছে না বলে নির্বাচন কর্মকর্তারা ফিরিয়ে দেন। ভোটদানেও ধীরগতি দেখা দেয়। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট কারচুপির যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। তবে স্বস্তির কথা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত গাজীপুরে ইভিএমে মোটামুটি সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। যে কারণে নীরব ভোটবিপ্লবে নৌকার পরাজয় ঘটেছে। সিলেটেও আমি আশাবাদী নৌকার বিপক্ষে লাঙল প্রতীকে সেই ভোটবিপ্লব হবে।’ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসানের ইভিএম নিয়ে শঙ্কা পুরোপুরি না কাটলেও তিনি ফলাফল নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের মানুষের প্রতিরোধের মুখে সরকার ইভিএমে কারচুপি করতে পারেনি। গাজীপুরের মানুষ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তাদের রায় দিয়েছে। সিলেটেও কোনো ধরনের কারচুপির চেষ্টা করা হলে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। গাজীপুরের মতো সিলেটেও সাধারণ ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যমে নৌকার বিপক্ষে রায় দেবেন। আর জনরায়ে হাতপাখা বিজয়ী হবে।’ গাজীপুরে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হলেও সিলেটে সেই আশঙ্কা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গাজীপুর ও সিলেটের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সিলেটের মানুষ উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। নৌকার পক্ষে প্রতিটি ওয়ার্ডে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইভিএম নিয়ে যারা এতদিন নানা গল্পকথা বলছিলেন, গাজীপুরের নির্বাচনের পর তাদের মুখে কুলুপ পড়েছে। মানুষের কাছে প্রমাণ হয়েছে তারা ভোটারদের বিভ্রান্ত করতেই ইভিএম নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছিলেন।’ সিলেটে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিগুণ শক্তিশালী উল্লেখ করে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী নৌকার জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করছেন। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ কখনো পরাজিত হয় না। এটা সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরেকবার প্রমাণিত হবে।’

 

সর্বশেষ খবর