সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

চকচকে টাকার জমজমাট হাট

৫০ বছর ধরে চলছে কেনাবেচা

হাসান ইমন

চকচকে টাকার জমজমাট হাট

নতুন চকচকে টাকার নোট সবারই প্রিয়। কেউ নিচ্ছেন ১০ টাকার বান্ডিল, কেউ ২০ টাকার, কেউ আবার ৫০ টাকার। এসব বান্ডিলে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা থাকে। নতুন টাকা কেউ নিচ্ছেন বাড়িতে ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য। আবার কেউ নিচ্ছেন ঈদের সালামি দিতে। কেউ আবার নিজের মানিব্যাগে গচ্ছিত রাখার জন্য। গত ৫০ বছর ধরে নতুন ও পুরাতন টাকা বেচাকেনা চলছে রাজধানীর গুলিস্তানে। ওইখানে গেলেই দেখা মিলে অদ্ভুত এই ‘টাকার হাটের’।

গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের সিঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে ও সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের ফুটপাতে বসে এই টাকার হাট। এ ছাড়া মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনেও বেচাকেনা হয় চকচকে টাকার নোট।

এই হাটে যে কেউ পুরাতন টাকা দিয়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু টাকা বেশি দিতে হয়। এ ছাড়া ছেঁড়া-ফাটা টাকাও বদল করে নেওয়ার সুযোগ আছে এখানে। প্রায় সারা বছরই এই হাটে নতুন টাকা বেচাকেনা হয়। তবে ঈদের সময় জমে ওঠে এই বাজার।

গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গুলিস্তানের ব্যস্ততম এই এলাকায় ২ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকার নোটের বান্ডিলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। পাশে কোনো লোক এলেই টাকার হাঁকডাক দিচ্ছেন তারা। এ সময় অনেকেই নতুন টাকা সংগ্রহে দরদাম করতেও দেখা যায়। বিকালের দিকে এ বাজার বেশ জমে ওঠে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানে ছেঁড়া টাকা বদলে দেওয়া হয়। যারা এই ছেঁড়া টাকা চালাতে পারে না তাদের কাছ থেকে টাকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে নোটগুলো কিনে নেন তারা। এ ছাড়া নতুন নোটের বান্ডিলও বিক্রি করেন।

এ ক্ষেত্রে নতুন ১০০ টাকার নোট হাজারে ১০০-১২০ টাকা বেশি দিতে হবে। ২০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে বাড়তি ১৫০-১৬০ টাকা বা ৫০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে বাড়তি ১০০ টাকা দিতে হয়। একইভাবে দুই-পাঁচ-দশ টাকার ৫০টি নোটের বান্ডিল নিতে বাড়তি ১৫০-১৮০ টাকা দিতে হবে। তবে চাহিদার সঙ্গে দামেরও পরিবর্তন হয়।

চাঁদপুরের সোহেল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি এখানে আট বছর ধরে ব্যবসা করছি। প্রতিদিন টুকটাক কিছু বেচাকেনা হয়। ১০ টাকা ২০ টাকার বান্ডিল বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। তবে ঈদের সময় সব থেকে বেশি বেচা-বিক্রি হয়। তাই সারা বছর ঈদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তিনি বলেন, নতুন টাকার এ ব্যবসায় কোনো রকম সংসার চলে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে হাজার খানেক টাকা লাভ হয়। কোনোদিন একেবারেই হয় না। এভাবেই চলছে।

দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রাজধানীর গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটের সামনে টাকার ব্যবসা করেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার সামচ্ছুজ্জামান। তিনি জানান, প্রতিদিন ২ টাকার নতুন নোট থেকে ১০০ টাকার নোটের বান্ডিল নিয়ে আসেন। আর ছেঁড়া, পোকামাকড়ে কাটা টাকা নেওয়া হয়। এসব টাকা কী পরিমাণে ছেঁড়া বা নষ্ট তার অবস্থা বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ৫০০ টাকার ছেঁড়া ২৫০-৪০০ টাকায় কেনা হয়। আর ১ হাজার টাকার নোট ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় কেনা হয়। সব মিলিয়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে বসেন তিনি।

ব্যবসায়ীরা জানান, উৎসব মৌসুমে তাদের টাকা বেচা-বিক্রির ব্যবসা জমে ওঠে। বিশেষ করে দুই ঈদে এর চাহিদা থাকে বেশি। সে সময় একজন ব্যবসায়ী টাকা বিক্রি করে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা আয় করেন। বছরের অন্যসব দিনে যে টাকা আয় হয় তার অর্ধেক আয় হয় দুই ঈদের সময়ে। উল্লেখ্য, প্রায় ৫০ বছর ধরে গুলিস্তানের এই এলাকায় এ হাটটি চলে আসছে। কম দামে টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা, নতুন টাকার বিনিময়ে ছেঁড়া ও পুরনো টাকা বিক্রি হয় এই ফুটপাতে। স্থানটি ঘিরেই অর্ধশতাধিক মানুষ টাকা বেচাকেনার ব্যবসা করেন। আর এই ব্যবসা দিয়েই ঘর-সংসার চলে সবার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর