মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুদ্রাবাজার নিয়ে ছয় উদ্যোগ

আমদানিতে কড়াকড়ি আরও এক বছর। রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার অনুসন্ধান। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা অব্যাহত। উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা। পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ, ডলারের একক আধিপত্য কমানো

মানিক মুনতাসির

মুদ্রাবাজার নিয়ে ছয় উদ্যোগ

সামষ্টিক অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ফেলেছে ডলার সংকট। ফলে টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মুদ্রাবাজারে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা। গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৯৩-৯৫ টাকা। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ১০৮ টাকায়। খোলা বাজারে এই দর আরও বেশি। তার আগে ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট শুরুর প্রাক্কালে প্রতি ডলার ছিল ৮৫-৮৬ টাকা। গত বছরের ৩১ মে পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি বছরের ৩১ মে-তে সেটা নেমে এসেছে ২৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে। এদিকে ডলারের সংকট কাটাতে টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। ফলে মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ বাজেটে ছয়টি কৌশলের কথা তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেগুলো হলো- আমদানিতে কড়াকড়ি চলবে আরও এক বছর। রপ্তানি বাড়াতে নতুনবাজার অনুসন্ধান করা হবে। অবশ্য এ নতুন বাজার অনুসন্ধানের কথা আরও অনেক আগে থেকেই বলে আসছে সরকার। ইউরোপ, আমেরিকার বাইরে অন্য কোনো রিজিয়নে রপ্তানি বাজার কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য এ খাতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে। প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও সচেতন ও আগ্রহী করতে এ প্রণোদনা ব্যাপকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। এদিকে অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বিভিন্ন সময়ে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ কাজে না এলেও পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তবে আমদানি-রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণারোপ করাতে পাচারের ঝুঁকিও অনেকটা কমে এসেছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া আমদানি ও রপ্তানিতে ডলারের একক আধিপত্য কমানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউয়ান কিংবা রুপিতে পেমেন্ট করা যায় কি না, সে বিষয়েও আলাপ-আলেচনা চলছে। এ বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় উঠে এসেছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন ও মুদ্রাবিনিময় হারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণারোপ করা হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আমদানি ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি সরকারের কৃচ্ছ্রতাসাধান বা ব্যয় সংকোচন নীতিও বহাল রয়েছে। যা আরও দেড় বছর আগে থেকে অনুসরণ করা হচ্ছে। সরকার মনে করে ইতোমধ্যে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের অস্থিতিশীলতা কিছুটা কমে এসেছে। আগামী বছরেও আমরা সতর্ক থাকব এবং সংকুলানমূলক নীতি গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মুদ্রাবাজারের অস্থিতিশীলতা কাটাতে হলে ডলারের সংকট কাটাতে হবে। এ জন্য আমাদের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া পাচার রোধে আমাদের আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় বাজেটে যত ঘোষণাই দেওয়া হোক না কেন, বাস্তবে কোনো কাজ হবে না বলে তিনি মনে করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর