পশ্চিমা দেশগুলোতে মন্দার মধ্যেও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়ে ৮৩৭ কোটি ডলার হয়েছে। অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারত। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই তিনটি দেশ থেকে রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক অর্জন করেছে।
জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদ্যমান প্রধান বাজারগুলো থেকে দেশের রপ্তানি গত অর্থবছরে কমে গেছে। বাংলাদেশের শীর্ষ পোশাক রপ্তানি বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯০১ কোটি ডলার থেকে ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ কমে ৮৫১ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানি কারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজার থেকে ৮৩৭ কোটি ডলার আয় হয়েছে। গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ের ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশই হয়েছে অপ্রচলিত বাজার থেকে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল মাত্র ১০৮ কোটি ডলারের বা মোট আয়ের ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। রপ্তানিকারকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডার বাইরে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, নিউজিল্যান্ড এবং তুরস্ক এখন সম্ভাব্য বাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্যগুলোর রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্যকরণের জন্য চলমান প্রচেষ্টার ফলে, নতুন বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বাজার পরিদর্শন, ট্রেড শোতে অংশগ্রহণ এবং অপ্রচলিত বাজারে পণ্য রপ্তানিতে সরকারি সহায়তা, বিশেষ করে নগদ প্রণোদনা।
এ ছাড়াও করোনা-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের মতো বৈশ্বিক কারণে অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ঐতিহ্যবাহী বাজারে চাহিদা কমায় রপ্তানিকারকরা এখন এ ধরনের অপ্রচলিত বাজারগুলোতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। এসব দেশের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়কালে জাপানে রপ্তানি ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৯ কোটি ডলার, অস্ট্রেলিয়ায় ৪২ শতাংশ বেড়ে ১১৫ কোটি ডলার, ভারতে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১০১ কোটি ডলার এবং কোরিয়ায় ২২ শতাংশ বেড়ে ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার ডলার হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি রাশিয়ায় প্রায় ২৭ শতাংশ কমে ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ডলার এবং চিলিতে ১১ শতাংশ কমে ১৬ লাখ ৩১ হাজার ডলার হয়েছে। বিজিএমইএর নেতারা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং অস্থিরতায় রপ্তানির প্রধান বাজারগুলোতে চাহিদা পরিবর্তন হচ্ছে। তাই অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি আয় এবং বাজারের অংশ বাড়ানোর জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। প্রধানত বাজারে বৈচিত্র্য আনতে এবং ঐতিহ্যবাহী গন্তব্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে কাজ করছেন তারা।
তারা আরও বলেন, আমরা এখন নতুন বাজার এবং পণ্য বৈচিত্র্যের ওপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। বিশেষ করে ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি ধরে রাখতে নন-কটন বা ম্যানমেইড ফাইবারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার থেকে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৩৫২ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। তবে, জার্মানি এবং পোল্যান্ডের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চলভুক্ত কিছু বড় বাজারে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। স্পেনে ৩৩৭ কোটি ডলার, ফ্রান্সে ২৯৪ কোটি ডলার, ইতালিতে ২২৭ কোটি ডলার, ডেনমার্কে ১২৮ কোটি ডলার এবং নেদারল্যান্ডসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৮৫ কোটি ডলারের। একই সময়ে, যুক্তরাজ্যে ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং কানাডায় ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।