মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

খোঁজ নেই লাশের খুনি গ্রেফতার

মাহবুব মমতাজী

ঢাকার দোহারে সাইদুল মৃধার (২৫) নিখোঁজের প্রায় পাঁচ মাস পর জানা যায় তিনি অপহরণের শিকার। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তার খুনের তথ্য মেলে। এরই মধ্যে খুনের দায় স্বীকার করে দুজন আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। সাইদুলের ঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসে আরেক খুনের রহস্য। তার সঙ্গে খুন হয়েছেন সোহেল নামে আরও একজন। তবে ঘটনার প্রায় আড়াই বছরেও পাওয়া যায়নি লাশ দুটি। ফলে এ ঘটনা তদন্তে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সংস্থাটি বলছে, দুটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের বিষয়টি উঠে এলেও লাশ পাওয়া না গেলে তা প্রমাণ করা যাবে না। আইনের অন্য ধারা অনুযায়ী চার্জশিট দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। অথচ খুনের সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত জানতে পারেননি তারা।

সিআইডির ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ডিআইজি ইমাম হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, এ মামলার বিষয়ে আদালত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেহেতু দুজনের স্বীকারোক্তিতে খুনের তথ্য বেরিয়ে আসছে, তাই প্রাথমিকভাবে চার্জশিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দোহারের ঘাটা এলাকায় সাইদুলদের বাড়ি। ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল সকাল ১১টায় বাসা থেকে বের হন তিনি। এরপর বাসায় ফেরেননি। তার খোঁজ না পেয়ে তিন দিন পর ২৩ এপ্রিল দোহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাইদুলের মা রাজিয়া সুলতানা। ওই সময় রাজিয়া পুলিশকে জানিয়েছিলেন, যেদিন সাইদুল বাড়ি থেকে বের হন, ওইদিন রাতে তিনি তার মাকে ফোন করে জানান, তিনি মাওয়া এলাকায় বন্ধুর বাসায় আছেন। সেখানে রাতে থাকবেন। এক রাতের কথা বলে তিন রাত পার হলেও ছেলে না ফেরায় তিনি থানায় জিডি করেন। জিডি তদন্তে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি থানা পুলিশ। এরই মধ্যে রাজিয়া নিজেই জানতে পারেন তার ছেলেকে ফোনে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সাজ্জাদ মোল্লা ও চঞ্চল মোল্লা নামে দুজন। ঘটনার পর থেকে পাঁচ মাস ধরে বিভিন্ন সময় তাদের নামে ছেলেকে অপহরণের মামলা করতে থানায় যান রাজিয়া। কিন্তু থানাপুলিশ মামলাটি নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে তিনি ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি আদালতে অপহরণ মামলা করেন। মামলায় সাজ্জাদ মোল্লা ও চঞ্চল মোল্লাকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত দেওয়া হয় থানা পুলিশকে। দুই মাসেও তদন্তে কূলকিনারা পায়নি থানার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে একই সালের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। সাইদুলের মা জানিয়েছেন, তিনি বারবার থানায় গেছেন, কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। তার ছেলে বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। সাজ্জাদ আর চঞ্চল ফোনে তাকে ডেকে নেয়। যাওয়ার সময় বলেছিল, তাকে চঞ্চল ড্রেজারে কাজ দেবে। তার অফিসে যাচ্ছে। এরপর তিনি শোনেন, ড্রেজারে কাজ করতে তার ছেলেকে লৌহজং পাঠানো হয়েছে। কয়েক দিন পার হলেও সাইদুল বাড়ি না আসায় তার অপর দুই ছেলে রায়হান আর রোহান ফলের বাজারে চঞ্চলের অফিসে যায় খোঁজ নিতে। কিন্তু সন্ধান পায়নি। আর ছেলের খোঁজে যতবারই তারা থানায় গেছেন ততবারই সেখানে চঞ্চলকে দেখেছেন। সূত্র জানায়, সিআইডির তদন্তের আগে নৌডাকাতির ঘটনায় সাতজনকে আটক করে দোহারের কুতুবপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ি। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ২২ জুন দোহার থানায় মামলা হয়। মামলায় সেলিম, মনির শেখ, কাউছার মোল্লা, রিমন হক, জাকির হোসেন, এমদাদুল হক এবং এবাদুলসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। একই বছরের ২৯ নভেম্বর আদালতে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। সাইদুলের অপহরণ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডির পরিদর্শক মিজানুর রহমান নৌডাকাতিতে অভিযুক্ত সাতজনের মধ্যে দুজনের সংশ্লিষ্টতা পান। মনির শেখ ও কাউছার মোল্লা এবং মামলার দুই নম্বর আসামি চঞ্চলকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। তাদের দেওয়া তথ্যে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি দোহার ফলের বাজার এলাকা থেকে সোহাগ বেপারি নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি সাইদুলের খুনের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। গত বছরের ২৬ জানুয়ারি একই এলাকা থেকে ইয়াছিন মোল্লাকেও গ্রেফতার করা হয়। তিনিও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা বলেছেন- ১ হাজার টাকা নিয়ে সাজ্জাদের সঙ্গে ঝামেলা ছিল সাইদুলের। তাই তাকে ড্রেজারে কাজ দেওয়ার কথা বলে লৌহজং নিয়ে যায়। নৌকায় করে পদ্মার একটি চরে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে তারা মাদক সেবন করে। এরপর পেছন থেকে সাইদুলকে গুলি করে মেরে ফেলে সাজ্জাদ। দেখে ফেলায় সাইদুলের চাচাতো ভাই সোহেলকে সাজ্জাদ বলেন, ‘তুই তো সব দেখছস, তুই বাইচ্চা থাইক্যা কী করবি’- এই বলে তাকেও গুলি করে মেরে ফেলে। লাশ দুটি চরের বালিতে পুঁতে ফেলে। এরপর নৌকা এবং সবার হাত-পা পেট্রল দিয়ে ধুয়ে ফেলে, যেন কোনো ছাপ না থাকে। যেখানে লাশ পুঁতে রাখা হয়েছিল সেখানেও পেট্রল ছিটিয়ে দেওয়া হয়, যাতে কুকুর শেয়াল লাশ টেনে বের করতে না পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর