ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে জনগণকে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতন করতে হবে। দেশের নাগরিকরা এখন অনেক বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ন্যাচারাল হ্যাজার্ড গেম তৈরি করে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
এ অধ্যাপক বলেন, ভূমিকম্পের আগে ব্যক্তি, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কার কী প্রস্তুতি থাকা উচিত, এ সময়ে কোন জায়গাগুলো নিরাপদ তা এ গেমের মাধ্যমে শেখানো যেতে পারে। এই গেমে বিভিন্ন লেভেল রাখা যেতে পারে। একটি লেভেল পার হলে আরেক লেভেলে একজন ব্যবহারকারী যেতে পারবেন। যদি এ বিষয়ে একটি আকর্ষণীয় গেম তৈরি করা যায় তাহলে বর্তমান প্রজন্মও বিষয়টিতে উৎসাহ বোধ করবে। তিনি বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে হাজার বছর ধরে ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চিত আছে। এটি একসময় বের হবেই, এর কোনো বিকল্প নেই। গত শনিবার যে ভূমিকম্প হয়েছে এর উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৭০ থেকে ১০০ কিমি দূরে। কিন্তু তারপরও সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ঢাকা। কারণ ঝুঁকির মাত্রা যে উপাদানগুলো বৃদ্ধি করে তার সব উপাদান ঢাকায় বিদ্যমান।
এ অধ্যাপক বলেন, ঢাকায় জনবসতি বেশি, এখানে নতুন-পুরনো মিলিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির ভবন রয়েছে। এ শহরে মাটি ভরাট করে গত দুই দশকে এমন জায়গা নেই যেখানে ভবন নির্মাণ হচ্ছে না। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে। ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে যে পরিমাণ খোলা জায়গা, খেলার মাঠ ও রাস্তা থাকা উচিত তা ২৫ শতাংশ হারে থাকার কথা থাকলেও আছে গড়ে ৭ শতাংশ। যা ভূমিকম্পের ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঢাকায় একটির সঙ্গে আরেকটি বিল্ডিং লাগানো। এখানে বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরি করা হচ্ছে।
রাজউক কর্তৃপক্ষ বলছে ৯০ শতাংশ ভবন বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হয়েছে। ভূমিকম্পে এই ভবনগুলোর ঝুঁকিও বেশি। নগরবাসীর মধ্যে ভূমিকম্প বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে ভূমিকম্প বিষয়ে ব্যক্তি, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে প্রস্তুতি রয়েছে তা বাংলাদেশে নেই। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত না হয়ে দুই-এক কদমের মধ্যে কীভাবে নিরাপদে থাকা যায় এ বিষয়েও আমাদের জ্ঞান নেই। এ জন্য গত শনিবারের ভূমিকম্পে অনেক মানুষ আহত হন। মানুষ ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হচ্ছে। এ আতঙ্ক কমাতে হবে। ভূমিকম্প পরবর্তীকালে কার কী দায়িত্ব এ বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু এর বদলে ভূমিকম্পে কী পদক্ষেপ নিলে মানুষ রক্ষা পাবে তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ স্বল্পমাত্রাপ্রবণ ভূমিকম্প এলাকায় অবস্থিত। কিন্তু যখন এখানে ভূমিকম্প হবে তখন সব ধ্বংস করে দিয়ে যাবে। সব বিবেচনায় ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা শহরগুলোর একটি। ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে ওয়ার্ডভিত্তিক অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষের মনোবল বৃদ্ধি করা যায়। এর মাধ্যমে কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক তৈরি হবে। এতে ভূমিকম্প বড় হলেও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হবে। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হলেও আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সেভাবেই আমাদের পলিসি গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের তেমন সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।