একটি হত্যার ঘটনা তদন্তকালে ‘মামা পার্টি’ ছিনতাই চক্রের সন্ধান পায় র্যাব-১০। ভাড়া করা গাড়িতে করেই ছিনতাই করত ওরা। টার্গেটের জন্য ঘুরত রাত ৩টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত। এর মধ্যে সুবিধামতো সময়ে টার্গেটকে গাড়িতে তুলে নিত ‘মামা পার্টি’র সদস্যরা। এভাবেই তারা দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে আসছিল। তবে এবার মামা পার্টির মধুচক্রে হানা দিয়ে মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০ এর সদস্যরা। গতকাল দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন। তিনি বলেন, গত বছরের ২৬ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাদ্দাম শেখ। এরপর সাদ্দামের ইজিবাইক ফেরত দেওয়ার কথা বলে নিহতের পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিকাশে ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে ইজিবাইক ছিনতাইকারীরা। ওই হত্যার ঘটনা তদন্তকালে ‘মামা পার্টি’ ছিনতাই চক্রটি সম্পর্কে জানা যায়। চক্রের মূলহোতা শাহিন রানা। এর সক্রিয় সদস্য ১০ জন। এর মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, গত বছরের ২৬ জুন ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় মো. শাহিন রানাসহ অন্য আসামিরা যাত্রী সেজে সাদ্দাম শেখের ইজিবাইক ভাড়া করে। সুযোগ বুঝে চালক সাদ্দামকে মারধর করে এবং চেতনানাশক ওষুধের মাধ্যমে অচেতন করে তাকে একটি মেহগনি বাগানে ফেলে রেখে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। অবশেষে মামা পার্টির মধুচক্রে হানা দিয়েছে র্যাব-১০ এর সদস্যরা। গ্রেফতার করেছে মূলহোতাসহ পাঁচজনকে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. রানা ওরফে মো. শাহীন ওরফে শাহীন রানা (৪৯), মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে মো. ইসলাম ওরফে ইসলাম মিয়া (৪৮), মো. সাগর ওরফে হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে মো. হাবিব (৫১), মো. ফারুক আহমদ ওরফে মো. ফারুক মিয়া ওরফে মো. ফারুক (৩৪) ও মো. আবুল কালাম (৫৩)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি হাইয়েস গাড়ি ও একটি করোলা প্রাইভেট কার, একটি হাতকড়া, চেতনানাশক ওষুধ, দুটি সুইচ গিয়ার চাকু, দুটি স্টিলের চাকু, একটি ক্ষুর, ছয়টি টাচ মোবাইল ফোন, পাঁচটি বাটন মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা। গ্রেফতারের পর তারা স্বীকার করে যে, চক্রের সদস্যরা কখনো আসামি মফিজুলের প্রাইভেট কার ব্যবহার করত।
কখনো তার মাধ্যমে অন্য কোনো প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাড়া নিত। এরপর মফিজুল এসব গাড়ি চালাত। শাহিন যাত্রী সেজে মফিজুলের পাশে বসে থাকত। অন্যরা তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচিত রুটে ১-২ কিলোমিটার পরপর অবস্থান করত। বাছাই করা স্থান থেকে যাত্রী উঠানো হতো। এরপর নির্জন স্থানে গাড়ি থামিয়ে অস্ত্র ও চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে যাত্রীদের কাছে থেকে মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিত চক্রের সদস্যরা। পরে ভুক্তভোগীকে তাদের সুবিধাজনক যে কোনো নির্জন স্থানে ফেলে রেখে পালিয়ে যেত।গ্রেফতার ব্যক্তিদের পরিচয় : গ্রেফতার শাহিন রানা মামা পার্টির দলনেতা। শাহিন ২০০০ সালে একটি চুরির মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে পাঁচ বছর কারাভোগ করে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে। মফিজুল ইসলাম পেশায় একজন গাড়িচালক। সে বিভিন্ন কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিল। সে বিভিন্ন ব্যক্তির গাড়ি ভাড়া করে অপরাধ করে আসছিল। পরে সে মলম পার্টি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক মামলাসহ তিনটি মামলা রয়েছে। সাগর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রাইভার হিসেবে কাজ করত। এ পেশার আড়ালে সে মামা পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিল। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাচেষ্টাসহ চারটি মামলা রয়েছে। গ্রুপের আরেক সদস্য ফারুক আহমদ। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই ও ডাকাতির দুটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া আবুল কালাম পেশাদার গাড়িচালক। সে-ও গাড়ি চালানোর আড়ালে চক্রের সঙ্গে মিশে ছিনতাই করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানায় একটি ছিনতাই মামলা রয়েছে।