দেশের সব সরকারি চাকরিজীবীকে একটি সফটওয়্যারের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পদোন্নতিসহ নানা কাজে স্বচ্ছতা আনতেই সাড়ে ১৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর তথ্য ডেটাবেজ করার এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চালুও হয়েছে সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির (জিইএমএস) সফটওয়্যারটি। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এটি নিয়ে কাজ করছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল্যায়ন হবে। বদলি করার ক্ষেত্রেও আগের সবকিছুর তথ্য থাকবে সফটওয়্যারে।
জানা গেছে, ৪৪টি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দফতর, সংস্থায় সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। বেতন গ্রেড আছে প্রথম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত। কর্মক্ষেত্রে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে কাটিয়ে দিচ্ছেন এমন অভিযোগ শত শত। আবার বিভিন্ন সময় পদোন্নতি নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগও রয়েছে। এসব সমস্যারও সমাধান আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, পদোন্নতি, পোস্টিংসহ নানা খাতে পুরোপুরি শৃঙ্খলা আনতে চালু হচ্ছে ‘সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি’ সফটওয়্যার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এক বছর আগে এ কার্যক্রম শুরু করেছি। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এটি বাস্তবায়ন করতে অনেক আগেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তাদের কর্মচারীদের তথ্য সংগ্রহ করছে। একই ফরম্যাটে একই সফটওয়্যারে সব মন্ত্রণালয় ডেটা রাখবে, তবে তার এক্সেস জনপ্রশাসনের কাছেও থাকবে। কোনো কারণে প্রত্যন্ত এলাকার কোনো বিভাগের কর্মচারীর তথ্য প্রয়োজন হলে সেটি যেন তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, জিইএমএস সফটওয়্যারে তিনটি কম্পোনেন্ট থাকবে। একটা কম্পোনেন্টে কর্মচারীদের তথ্য থাকবে, আরেকটায় অর্গানাইজেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বিভিন্ন দফতর, পরিদফতরের পদসংখ্যা জানা যাবে। আরেকটা হলো পিএমএস সিস্টেম, সেখানে বিভিন্ন পারফরম্যান্স দেখা যাবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, সফটওয়্যার সিস্টেমে প্রশিক্ষণ, নিয়োগ, সংগঠন ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার অনেকগুলো মডিউল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এতে প্রাথমিকভাবে নেওয়া হচ্ছে নবম গ্রেডের ওপরের ১ লাখ ১৫ হাজার সরকারি কর্মচারীর তথ্য। এসব কর্মচারীর বার্ষিক মূল্যায়ন সফটওয়্যারের মাধ্যমেই হবে। এ ছাড়া কোন কর্মী কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে, কোন ক্ষেত্রে কার দক্ষতা বেশি, কাকে কোন জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হবে এসব কিছুই এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হবে। এটি পুরোপুরি চালু হলে আসবে স্বচ্ছতা। তবে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বাড়াতে হবে নজরদারি। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সফটওয়্যারটি কর্মকর্তাদের জন্য করা হয়েছে, যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি সব মন্ত্রণালয়ে চালু হবে। এটি সরকারি চাকরিজীবীদের কাজের গতি বাড়াতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কেননা এখানে যে ২০টি গ্রেডের কর্মচারী আছেন সব গ্রেডের তথ্যই থাকবে। দক্ষতা অনুযায়ী চাকরিজীবীদের মূল্যায়ন করা যাবে এবং সঠিক স্থানে সঠিক দায়িত্ব দেওয়া যাবে। এদিকে একই সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিদ্যমান বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) বাদ দিয়ে কর্মভিত্তিক নতুন অনলাইন মূল্যায়ন ব্যবস্থা এপিএআর (অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স অ্যাপ্রাইজাল রিপোর্ট-বার্ষিক কর্মকৃতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন) করা হচ্ছে। এপিএআর কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা এই সফটওয়্যারে যুক্ত করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এপিএআর পদ্ধতি চালু হলে নবম থেকে দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মচারীদের পাঁচটি গ্রেডে মূল্যায়ন করা হবে। ভালো গ্রেডপ্রাপ্তদের দেওয়া হবে প্রণোদনা। আর খারাপ গ্রেড পেলে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে প্রশিক্ষণ, বই বা জার্নাল পড়া এবং অন্য কর্মচারীর অধীনে কাজ করতে হবে। বিদ্যমান এসিআর পদ্ধতিতে ঊর্ধ্বতনরা অধীনস্থ কর্মচারীদের শুধু পেশাগত মূল্যায়ন করেন। তবে কে কত নম্বর পান, তা জানার কোনো সুযোগ নেই। এপিএআর চালু হলে কর্মচারীদের কাজের জন্য ৬০ নম্বর থাকবে, আর বাকি ৪০ নম্বর ব্যক্তিগত ও পেশাগত মূল্যায়ন করা হবে। অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে এপিএআর করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বচ্ছ, আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতি ব্যবহার করে কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা এবং দক্ষতা বাড়াতে এপিএআর করা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিদুল ইসলাম বলেন, জিইএমএস সফটওয়্যারের একটি চমৎকার সিস্টেম চালু হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। পাশাপাশি আমাদের এপিএআর চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এতে এমন অপশন আছে যেখানে আমার বস আমার মূল্যায়ন করবেন, আমিও বসের মূল্যায়ন করতে পারব।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        