সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে দেশে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য, লুটপাট আর ডাকাতি। হামলার ভয়ে পুলিশ সদস্যরা থানায় তালা মেরে কর্মবিরতিতে গেছেন। এই সুযোগে দুর্বৃত্ত এবং ডাকাতরা যে যার মতো বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা করছে। লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। কোথাও গুলি ও কুপিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। রাজধানীর সর্বত্র এখন ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন মসজিদে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। ডাকাতির শিকার হতে পারে এই ভয়ে নগরবাসী নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গত বুধবার রাত ১২টার পর থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর তাঁতীবাজার, মোহাম্মদপুর, আরশিনগর, আটিবাজার, নয়াবাজার, বসিলা, বসিলা মেট্রো হাউজিং, মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিং, শেখেরটেক, জিগাতলা, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, শনিরআখড়া, পল্লবী, কালশি, মিরপুর-২ ও ১০, ইসিবি চত্বর এলাকা, উত্তরার ৪, ৬, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টর, আজমপুর কাঁচাবাজার, হাজীপাড়াসহ দক্ষিণখান ও উত্তরখান এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে টানা ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আতঙ্কিত নগরবাসী নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। আলো জ্বালিয়ে তারা সতর্ক থাকছেন।
গত বুধবার রাতে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে ৭৪/১ নম্বর কেডি গোল্ডের স্বত্বাধিকার কৃষ্ণ কান্ত দাস এবং তার ছেলে অর্ণব কুমার দাস ও অনন্য কুমার দাস দোকানে অবস্থান করছিলেন। এ সময় স্থানীয় মাহাবুব হক শাহিন, টেপু, ঝন্টু, হবি, আনোয়ার হোসেন, নারায়ণ সরকার নান্টু এবং তাদের ১০০/১৫০ লোকজন মিলে সোনার দোকানে ফিল্মি স্টাইলে ডাকাতি করে। বাধা দিলে তাদের মারধর এবং অনন্য কুমার দাসকে কুপিয়ে দোকান লুট করে। তারা কেডি গোল্ডের দোকান থেকে ১০০ ভরি সোনা এবং নগদ ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নেন অনন্য কুমার দাস।
স্থানীয়রা বলছেন, এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে খবর পেয়ে মসজিদের মাইকে সতর্ক করা হয়। পরে লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন এবং তাদের ধাওয়া করেন। বিভিন্ন জায়গায় ডাকাত সদস্যরা আটকও হয়েছে। পরে তাদেরকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে এই অবস্থা কত দিন ধরে চলবে তারা তা জানেন না। বিষয়টি নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসি-তামাশাও করছেন। তবে কেউ কেউ ডাকাতির প্রমাণস্বরূপ এলাকায় ডাকাতদের ধাওয়া দেওয়া ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এমন ঘটনার পরও ফেসবুকে অনেকে এই ঘটনাকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। নিজ নিজ এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে ডাকাত প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, বসিলা থেকে চারজন, মিরপুর থেকে ১৭ জনকে এলাকাবাসী আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন। তবে ডাকাতদের এলোপাতাড়ি অস্ত্রের আঘাতে মিরপুরের ইসিবি চত্বর এলাকায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর এলাকায় পাঁচজনকে অস্ত্রসহ আটক করে এলাকাবাসী। পরে তাদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও উত্তরা এলাকায় কয়েকজনকে আটক করে এলাকাবাসী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, যারা ডাকাতি করছে তাদের বেশির ভাগ টোকাই এবং উঠতি তরুণ। এদিকে ডাকাতি প্রতিরোধে রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টা সেনাবাহিনী ও বিজিবি সক্রিয় রয়েছে। সেনাবাহিনী বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। যে কোনো নাশকতামূলক কর্মকান্ড, হানাহানি এবং প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হলে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। যোগাযোগ নম্বর- ঢাকার লালবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আগারগাঁও, মহাখালী, তেজগাঁও, এলিফেন্ট রোড এবং কাঁটাবন ০১৭৬৯০৫১৮৩৮ ও ০১৭৬৯০৫১৮৩৯; ঢাকার গুলশান, বারিধারা, বনানী, বসুন্ধরা, বাড্ডা, রামপুরা, শাহজাহানপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান এবং বনশ্রী ০১৭৬৯০১৩১০২ ও ০১৭৬৯০৫৩১৫৪; ঢাকার মিরপুর-১ থেকে মিরপুর-১৪, খিলক্ষেত, উত্তরা এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ০১৭৬৯০২৪২১০ ও ০১৭৬৯০২৪২১১; ঢাকার মতিঝিল, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, শান্তিনগর, ইস্কাটন, রাজারবাগ, পল্টন, গুলিস্তান এবং পুরান ঢাকা ০১৭৬৯০৯২৪২৮ ও ০১৭৬৯০৯৫৪১৯। বিজিবি বলছে, রাজধানী ঢাকায় ডাকাতি অথবা জননিরাপত্তা হানিকর কর্মকান্ড প্রতিরোধে বিজিবির সহায়তার জন্য যোগাযোগ নম্বর- ০১৭৬৯-৬০০৫৫৫ এবং ০১৮৮৯-৬০০৫৫৫।