রাজধানী ঢাকা এখন বিভিন্ন রঙে রঙিন। মেট্রোরেলের পিলার, শহরের দেয়াল এবং বিভিন্ন স্থাপনায় বাংলাদেশের মানচিত্র, পতাকা, ফুল, পাখি ইত্যাদির নকশা বা গ্রাফিতি নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছেন শিক্ষার্থীরা। আছে ভাষা আন্দোলন থেকে সম্প্রতি হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস। এতে ছাত্রদের আন্দোলনের সময় রাজধানীর যে সড়ক ও স্থাপনাগুলো বিভিন্ন সেøাগানে ভরে গিয়েছিল তাও ঢাকা পড়ছে শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক চিত্রকর্মে। পাশাপাশি টানা চতুর্থদিনের মতো গতকালও সড়কে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যান নিয়ন্ত্রণ করে। ছুটির দিনে সকাল থেকেই ঢাকার সড়কে যান নিয়ন্ত্রণ ও দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে দেখা গেছে।
মিরপুর ১২ নম্বর থেকে শুরু করে বিজয় সরণির মেট্রোরেলের পিলারগুলো গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিভিন্ন স্লোগানে ছেয়ে যায়। এ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে শিক্ষার্থীরা এবার ঢাকার বিভিন্ন স্থাপনায় আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যে স্লোগানগুলো লিখেছেন তা মুছে দিচ্ছেন। নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে এবং একটি শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই রং-তুলি জোগাড় করে এসব শিল্পকর্ম করছেন। কথা হলে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থী আঁখি আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আন্দোলনের সময় মেট্রোরেলের এ পিলারগুলোর বেশির ভাগেই বিভিন্ন স্লোগান লেখা হয়। আমরা নিজেদের সম্পদ ও শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় এখন আবার স্লোগানগুলো মুছে নতুন করে এখানে বিভিন্ন গ্রাফিতি আঁকছি।’ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়ে শিক্ষার্থীদের এসব গ্রাফিতি ও শিল্পকর্ম আঁকায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। তারা ছোট ছোট কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এ কাজ করছিলেন। এর মধ্যে একজন প্রথমে সাদা রং দিয়ে দেয়ালের স্লোগান মুছে দিচ্ছেন। তারপর পেনসিল দিয়ে আরেকজন গ্রাফিতি ফুটিয়ে তুলছেন। সেই পেনসিলে আঁকা চিত্রকর্মের ওপর রঙের প্রলেপ দিয়ে যাচ্ছেন আরেক শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের হাতে মুখে রং লেগে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু তারা বেশ উৎসাহ এবং আনন্দ নিয়েই নিজেদের কাজ করছিলেন।
সড়কগুলো রঙিন রঙে রাঙিয়ে তোলার পাশাপাশি গতকালও ঢাকার সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। প্রথম তিন দিনের তুলনায় গতকাল ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও সড়কে তুলনামূলক বেশি শিক্ষার্থীদের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। এদিন তাদের সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তবে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের চেয়ে কঠোরভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন বলে বিভিন্ন যান চালকরা মনে করেন। মিরপুর কাজিপাড়া এলাকায় এক বাসচালক নিয়ম ভেঙে ইউটার্ন নেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে থামিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ঘুরে সঠিক পথ দিয়ে আসতে বলেন। সেই চালক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ শিক্ষার্থীদের মতোন অ্যাতো কঠোর না। হেগোরো ম্যানেজ করতে পারলেও শিক্ষার্থীদের ম্যানেজ করা যাইতাছে না’।
বিজয় সরণিতে লেন মেনে গাড়ি চালানো, পথচারী পারাপারের সময় গাড়ি আটকে দেওয়া এবং এক লেন থেকে অন্য লেনে গাড়ি চালানোর আগে ইন্ডিকেটর দেওয়ার জন্য এ শিক্ষার্থীদের দৃঢ় পদক্ষেপ ছিল চোখে পড়ার মতো। হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি আর হাতের ইশারায় শিক্ষার্থীরা যেভাবে গোটা শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে তা দীর্ঘ সময় ধরে দেশের কোনো ক্ষমতাসীন সরকার কোটি কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেও করতে পারেনি বলে নগরবাসীদের অনেকে মন্তব্য করেন।