গণ অভ্যুত্থান যারা ঘটিয়েছে তারা কে কোন রাজনৈতিক পরিচয় বহন করেন, তা কিন্তু দেখা হয়নি। তাই এখনো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারাই গুরুত্বপূর্ণ। সাদাকে সাদা, আর কালোকে কালো বলাই রাষ্ট্র সংস্কারের মূল লক্ষ্য বলে জানালেন ঢাকা থেকে আসা কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা।
গতকাল দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ দাশ মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তারা দলমত নির্বিশেষে সবাইকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। গণ অভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন আবদুল হান্নান মাসুদ (ঢাবি), সানজানা আফিফা অদিতি (ঢাবি), রাইয়ান ফেরদৌস (ঢাবি), তৌহিদ আহমেদ আশিক (শেকৃবি)। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এম এ সাঈদ (ঢাবি), সিনথিয়া জাহিন আয়েশা (বদরুন্নেসা কলেজ), হাসিবুল হোসেন শান্ত (নর্থ সাউথ), মোবাশ্বেরা করিম মিমি (এআইইউবি), শহিদুল ইসলাম শাহেদ (ববি), জিহাদ হোসাইন (ঢাকা কলেজ)।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনকে কেউ দলীয়করণ করার চেষ্টা করবেন না। আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে পুঁজি করে আপনারা যদি ভেবে থাকেন আবার দুর্নীতি শুরু করবেন। তবে ছাত্র-নাগরিকরা আপনাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে। আমরা বুলেট-বোমা ভয় পাই না। তাই দুর্নীতিবাজরা সতর্ক হয়ে যান।
সমন্বয়করা বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন ছিল ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে। এই দুর্নীতিবাজরা কৌশলে আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চায়। এজন্য অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়করা।
তারা বলেন, ৫ আগস্ট ও তার পূর্বে যে-ই গণহত্যার শিকার এদেশের মানুষ হয়েছে এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। আমরা নৈরাজ্য, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজির রাজনীতির ইতি টেনে দিতে চাই। সারা দেশে লুটপাট, সহিংসতা যারা করেছেন তাদের উদ্দেশে বলব, আপনারা এখনই ইনসাফ, ন্যায়ের পথ অবলম্বন করুন। আমরা জানি অনেকের সঙ্গে চরম অন্যায় করা হয়েছে তাদের নামে মামলা দিন দেশের আইন আপনার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিচার করবে। আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে দেশকে নৈরাজ্য বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারি না। এটা চরম অন্যায়। আমরা যদি নিজেদের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তবে বুঝতে হবে আমাদের মধ্যে আওয়ামী, স্বৈরাচারী চরিত্র বিদ্যমান। এই চরিত্র ২০২৪ এর আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই চরিত্র বর্জন করতে না পারলে আমাদের শহীদ, আহত ভাইদের ত্যাগের অবমূল্যায়ন করা হবে বলে দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক। বৈষম্যবিরোধী মঞ্চে আমরা এক ও অভিন্ন হয়ে স্বৈরাচার সংশ্লিষ্ট সব দুর্নীতি এদেশ থেকে মুছে দেব ইনশা আল্লাহ।
সভায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষার্থীরা মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে তাদের সমস্যা তুলে ধরেন। সভা শেষে গণ অভ্যুত্থানের শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করা হয়।
এর আগে ঢাকা থেকে আগত ১০ সদস্যের এই টিম বরিশাল পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিকালে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এবং সন্ধ্যায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা।