ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেল শেরপুরের মজার মিষ্টি ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস। শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরপরই শহরজুড়ে মিষ্টান্ন পল্লীতে আনন্দ উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। এ উপলক্ষে সাধারণ মানুষের মাঝে ছানার পায়েস বিতরণ করেছে জেলা ব্র্যান্ডিং ওয়েবসাইট ‘আওয়ার শেরপুর’।
আওয়ার শেরপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছানার পায়েস শেরপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। এটি শেরপুরের ব্র্যান্ডিং ও ঐতিহ্য আরও বহুদূর নিয়ে যাবে।’ ছানার পায়েস বানানোর কৌশল জানালেন মিষ্টি কারিগর রিপন চন্দ্র ভদ্র। তিনি বলেন, ছানার পায়েস তৈরি করতে খাঁটি দুধ, চিনি, ময়দা ও এলাচ লাগে। প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করা হয়। এই গুটি চিনিমিশ্রিত শিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করা ক্ষীরে ছেড়ে হালকা আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু এই মিষ্টি। ১ কেজি ছানার পায়েস তৈরি করার জন্য ২ কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এলাচ লাগে। শেরপুর শহরের রঘুনাথ বাজার মহল্লার অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বাপ্পি দে জানান, ‘শেরপুরের প্রশাসন, সাংবাদিক, সুধীমহল থেকে শুরু করে সর্বমহলের সহযোগিতায় জিআই পণ্য হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস স্বীকৃতি পাওয়ায় শেরপুরের সুনামও ছড়াবে।’ জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের ৪৪তম জিআই পণ্যের মর্যাদা অর্জন করেছে শেরপুরের ছানার পায়েস। আমরা আজকেই সনদের কপি হাতে পেয়েছি। জিআই পণ্য হওয়ার কারণে তা সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে। শেরপুরের সম্ভাবনায় অন্যান্য আরও কয়েকটি পণ্যের সরকারের কাছে জিআই স্বীকৃতি চাওয়া হবে।’ উল্লেখ্য, শেরপুরের ছানার পায়েসের ঐতিহ্য ২০০ বছরের পুরনো। কথিত আছে, নানা অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ জমিদাররা শেরপুরে আসতেন। সঙ্গে আনতেন মিষ্টির কারিগর। এ অঞ্চলে প্রচুর খাঁটি গরুর দুধ থেকে কারিগররা বানাতেন ছানার পায়েস। এই ছানার পায়েস জমিদাররা নিজেরা খেতেন, পরিবারের জন্য নিয়ে যেতেন, কর্মচারী, পাইক-পেয়াদাদের দিতেন। কখনো কখনো প্রজারাও পেতেন। আস্তে আস্তে এই মজার মিষ্টি পণ্যটি বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টির দোকানগুলোতে বানানো ও বিপণন শুরু হয়। বর্তমানে জেলা সদর ও সদরের বাইরে অন্তত ৫০টি দোকানে ছানার পায়েস হচ্ছে। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ কেজি ছানার পায়েস বিক্রি হয়।