দেশে টম্যাটোর বড় অংশ উৎপাদিত হয় রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে টম্যাটো উৎপাদনে নীরব বিপ্লব হয়েছে গত এক দশকে। এজন্য গোদাগাড়ী পেয়েছে ‘টম্যাটো রাজ্য’র পরিচিতি। তবে গত সাত বছরে তেমন বাড়েনি চাষের জমি। কৃষকরা বলছেন, বছরভেদে টম্যাটোর দাম বাড়া-কমায় চাষে থিতু হতে পারছেন না তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গোদাগাড়ীতে টম্যাটোর আবাদ হয় ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ৫৮ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন। এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবাদ ২ হাজার ১৫০ হেক্টর, উৎপাদন ৪৯ হাজার ৫২৫ টন; ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদ ২ হাজার ৪৬০ হেক্টর, উৎপাদন ৫৯ হাজার ৪০ টন; ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ ২ হাজার ৮৫০ হেক্টর, উৎপাদন ৭১ হাজার ২৫০ টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ ৩ হাজার ১৫ হেক্টর, উৎপাদন ৮৭ হাজার ৪৩৫ টন; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর; উৎপাদন ৬৫ হাজার ১০৫ টন এবং সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টম্যাটোর আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৭৬০ টন। এ বছর গড়ে ১৫ টাকা কেজি করে বিক্রি ধরা হলে আয় হবে ১১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এসব টম্যাটো চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আট হাজার কৃষক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি থেকেই বিক্রি হয় এসব টম্যাটো। উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় টম্যাটো চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে টম্যাটোতে আগ্রহ বাড়ছে। সাধারণত আউশ ধান কেটে নেওয়ার পরে টম্যাটোর চাষ শুরু হয়। গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৭-২০ জাতের টম্যাটোর চাষ হয়। যার মধ্যে বেশির ভাগই হাইব্রিড। তবে অন্য যে কোনো মাঠ ফসলের চেয়ে টম্যাটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক। তবে ভালো ফলন, বীজ ও দাম নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে কোনো বছর চাষের হার বেড়েছে, আবার কোনো বছর কমেছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার হেলিপ্যাড এলাকার কৃষক নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘গোদাগাড়ীতে আগের মতো টম্যাটো চাষ নেই। এখন যা হয় সব মাঠেই বিক্রি হয়ে যায়। আগে তো মাঠের পাশেই অনেক টম্যাটো দেখা যেত। এখন সেখানে দেখা যায় না। তবে চাষ আছে। মানুষ চাষ করছে। ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই টম্যাটো কিনে নেন। লাভও হচ্ছে।’ গো-গ্রামের চাষি জুয়েল বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরেই টম্যাটো চাষ করছি। গত বছর তেমন দাম পাইনি। এজন্য এবার অল্প পরিমাণ জমিতে চাষ করেছি। বাকিটাতে সরিষার আবাদ করেছি। তবে সিজন তো এখন শেষ। ভালোই দাম পেয়েছি।’
কৃষক আবদুল হাদী জানান, এবার ৬৪২ প্রজাতির (একটি জাতের নাম) টম্যাটো চাষ করেছেন। তবে অনেকে অন্য জাতের টম্যাটো চাষ করেছেন। এ বছর তুলনামূলক গাছে টম্যাটো কম। ভালো ফলন হয়নি। তবে দাম মোটামুটি ভালো। টম্যাটো ব্যবসায়ী শামসুল আলম বাবু জানান, গোদাগাড়ীর টম্যাটো এক বছর ভালো গেলে পরের বছর খারাপ যায়। মূলত বাজার, বীজ, ভালো ফলন এসবের ওপরে নির্ভর করেই চাষ কমে, আবার বাড়ে। এবার ভালো টম্যাটো আছে। ভালো দাম আছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন এক ট্রাক করে টম্যাটো ঢাকায় পাঠাই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লায় যাচ্ছে এসব টম্যাটো। তবে এবার দাম বেশি হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, এ অঞ্চলে দুবার টম্যাটোর চাষ হয়। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালীন টম্যাটো আছে। এই টম্যাটোর বেশি দাম পান চাষিরা। এ বছর এই টম্যাটো ১৫-১৬০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গড়ে ১৫ টাকা কেজি করে বিক্রি ধরা হলে আয় হবে ১১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, টম্যাটো বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।