জনপ্রশাসনে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সংখ্যা বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর অথবা কাউকে করা হয় ওএসডি। বর্তমানে প্রশাসনে সহকারী সচিব থেকে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ছয় হাজার ৫৫৭ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ শর বেশি কর্মকর্তা ওএসডি হিসেবে আছেন। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে ওএসডি করা কর্মকর্তার সংখ্যা দেড় শতাধিকের বেশি। আর ছুটি, প্রেষণ এবং পদোন্নতির কারণে অন্যদের ওএসডি করা হয়েছে। ওএসডি হলে হাজিরা দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে আওয়ামী ঘরোনার ও সুবিধা নেওয়া কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অনেক বঞ্চিত কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অতিউৎসাহী কর্মকর্তাদের ওএসডি করে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরের বছর ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ২৫০ জন। এর মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিএনপি-জামায়াত ঘরানার কর্মকর্তা ওএসডি ছিলেন শতাধিক। সবচেয়ে কম ওএসডি ছিল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মাত্র ৫৮ জন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মচারী বাতায়ন (জেমস) প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে বর্তমানে ৫০৯ জন কর্মকর্তা ওএসডিতে আছেন। এদের মধ্যে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ১২ জন, গ্রেড-১ দুজন, অতিরিক্ত সচিব ২৬ জন, যুগ্ম সচিব ১৪০ জন, উপসচিব ১১৬ জন, সিনিয়র সহকারী সচিব ১২৯ জন রয়েছেন। এ ছাড়াও সহকারী সচিব ৭৬ জন, সিনিয়র সহকারী প্রধান আটজন কর্মকর্তা রয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সিনিয়র সচিব, সচিব ও সমমর্যাদার পদে ৮৩ কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে ওএসডি আছেন ১৪ জন। ওএসডি সিনিয়র সচিবদের মধ্যে রয়েছেন মো. মোস্তফা কামাল, মো. মশিউর রহমান ও মো. মনজুর হোসেন। সচিব হিসেবে ওএসডি আছেন মো. সামসুল আরেফিন, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, মো. আজিজুর রহমান, মো. নুরুল আলম, মো. খায়রুল আলম শেখ, ফরিদ উদ্দিন আহমদ, রেহানা পারভীন, শফিউল আজিম এবং এ কে এম মতিউর রহমান। ওএসডি কর্মকর্তাদের কাজ নিয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের সুনির্দিষ্ট কাজ বলা যাবে না, যেহেতু ডেস্ক নেই। লিয়েনের জন্য ওএসডিতে থাকলে তারা তো বিদেশ যান। প্রশাসনিক কারণে হলে হাজিরা ছাড়া তেমন কাজ নেই। জানা গেছে, ওএসডি কর্মকর্তাদের নিয়মিত অফিস করতে হয় না। বসার জায়গা নেই বললেই চলে। যারা সপ্তাহে মাসে এক দুবার আসেন তারা জনপ্রশাসনের লাইব্রেরিতে বসে সময় কাটান বা ব্যাচমেটদের রুমে সময় কাটিয়ে হাজিরা দিয়ে চলে যান। ওএসডি থাকা এই বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার কাজ না থাকার পরও প্রতি মাসে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে সরকারের কয়েক কোটি টাকা দিতে হচ্ছে। সে কারণে এসব কর্মকর্তাদের মেধাকে ব্যবহারের কথাও বলছেন বিশিষ্টজনরা। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষা ছুটিতে যারা আছেন তারা কাজের মধ্যে আছেন, পদোন্নতি যারা পেয়েছেন এমন কেউ পোস্টিং না পেলে দ্রুত দিতে হবে। আর রাজনৈতিক কারণে যারা ওএসডি তাদের থেকে বাছাই করে ভালো কর্মকর্তাদের যারা একেবারে দলদাস ছিল না তাদের কাজে লাগানো দরকার। এতে দেশের মঙ্গল। ওএসডির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য সাবেক জেলা প্রশাসকদের মধ্যে কাউকে ওএসডি, কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন অনিয়ম ও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করার কারণেও কেউ কেউ ওএসডি হয়েছেন। ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের কোনো পক্ষপাত নেই। পক্ষপাতমূলকভাবে বা কোনো কিছুর বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। সব সিদ্ধান্ত হবে নিয়মনীতির মধ্যে থেকে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা অনেক ডিসিসহ অনেকেই ওএসডি হয়েছেন। ২০২৪-এ দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ফলে ওএসডির তালিকা আরও লম্বা হতে পারে মনে করছেন অনেকে।