যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপট আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এজন্য সরকারের উচিত একটি টিম গঠন করা। টিম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। বাণিজ্য চুক্তির দিকে নজর দেবে। আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য টিকফার মাধ্যমে যোগাযোগ করবে এফটিএর জন্য। এজন্য ট্যারিফ সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ বাড়াতে হবে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য পুনর্গঠন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, কি-নোট উপস্থাপন করেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার। বক্তব্য দেন আইবিএফবি সভাপতি লুতফুন নিসা সৌদীয়া খান, আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি এম হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা ভালো নয়। বাংলাদেশের পক্ষে সেখানে কথা বলারও কেউ নেই। তাই বিষয়টি সমাধানে এজেন্সির কথা সরকার ভাবছে। আমরা যদি বেশি পরিমাণ তুলা আমদানি করতে পারি, তাহলে কয়েকজন লবি বিনা টাকায় পাওয়া যাবে। তারা আমাদের বন্দরে ওয়্যারহাউস করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে আইপি (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি) বাস্তবায়ন করার লোক নেই। আইপি বাস্তবায়ন করার জন্য বিশেষ লোকের প্রয়োজন হয়। এজন্য আমরা চাইলেও পারি না। বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করবে। গ্র্যাজুশেনের পর কী ধরনের সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে কাজ করছি।’
সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘আমদানি করা পণ্য শুল্ক বিভাগ থেকে খালাস করতে ১৭টি সই ও সাত থেকে আট দিন লাগে। আমাদের দেশে পণ্য খালাসে অনেক দিন লাগলেও ভিয়েতনামে লাগে এক দিনেরও কম। ফলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি। এ পরিস্থিতিতে শুল্ক বিভাগের আধুনিকায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। ফলে পণ্য খালাসের সময় কমানোর বিকল্প নেই। কাস্টমসের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষি করার জন্য টিম গঠন করতে হবে। সে টিমে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, বিশেষজ্ঞ লোক থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের থেকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব চায়। চায়না করতে পারলে আমরাও পারব।’
ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক সমাধান করতে হবে। এজন্য বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে দরকষাকষি করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের পণ্য বৈচিত্র্যকরণ করতে হবে। গত ২৫ বছরেও আমরা পণ্য বৈচিত্র্যকরণ করতে পারিনি। এজন্য রপ্তানি পণ্যের প্রণোদনা বাড়াতে হবে। প্রণোদনা না বাড়ালে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ হবে না।’
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এফটিএ কঠিন কিছু না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ করতে হবে। এ বিষয়ে টিকফা প্ল্যাটফর্মে আমাদের আলোচনা করতে হবে। এর বাইরে আমাদের পিটিএ করা যেতে পারে। এ চুক্তির জন্য যে শর্তগুলো রয়েছে তা আমাদের নিজেদের কারণেই পূরণ করা প্রয়োজন।’