খোলাবাজারে ইউএস ডলারের দাম ১২৪ টাকা থেকে ১২৫ টাকায় উঠেছে। তবে ক্রেতা কম। রাজধানীর মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে কিছু উৎসুক বিক্রেতার বাড়তি দামে ডলার বিক্রির প্রবণতা ছিল।
দেশে ইউএস ডলারের দাম তিন বছর পর বাজারভিত্তিক করার পর গতকাল রাজধানীর খোলাবাজারে এই চিত্র দেখা গেছে। তবে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে অহেতুক ডলারের দাম না বাড়ায় সে জন্য খোলাবাজারে কঠোর নজরদারি রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এ জন্য মাঠপর্যায়ে সাতটি দল কাজ করছে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এস এম জামান বলেন, ‘ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াটা একটা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। গত সপ্তাহের শেষে এটা ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এর প্রভাব পড়তে সময় লাগবে। আমরা এখনো পর্যবেক্ষণে আছি। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২২-১২৩ টাকার মধ্যেই আমরা ডলার কেনাবেচা করছি। তবে কিছু কিছু মানি চেঞ্জার আছে যারা সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেয়। এমন কিছু মানি চেঞ্জারে দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে। তবে এটা নির্ধারিত সীমার মধ্যেই। যে কোনো সিদ্ধান্তের প্রভাব পুরোপুরি পড়তে তিন থেকে পাঁচ কর্মদিবস লেগে যায়। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’ গত বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেন। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে এ উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটি ডলারের দাম কী হবে, তা ব্যাংক ও গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।
ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পক্ষ থেকে অবশ্য জোর তদারকি থাকবে। এখন বাজারে ডলারের একটি ভিত্তিমূল্য থাকবে। এর কাছাকাছি দামে কেনাবেচা করতে হবে। সে অনুযায়ী গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম আগের মতো ১২২ টাকা ঘোষণা করে। এই দামে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ১ কোটি ৪১ লাখ ডলার কেনাবেচা করে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির কারণে ব্যাংকগুলো বাড়তি দামে প্রবাস আয়ের ডলারও কেনেনি। এদিন অনেক ব্যাংক ডলারের দাম ঘোষণা করেনি। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার পরও ডলারের বাজার স্বাভাবিকই
ছিল। ব্যাংকে প্রতি ডলার ১২২ থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হয়েছে। ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো বাড়তি দাম ‘অফার’ করছে না। আবার বেশি দাম চাওয়া কয়েকটি
এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার না কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কিছু ব্যাংক সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৫০ পয়সা দামে ডলার কেনে। আবার অনেক ব্যাংক ১২২ টাকার বেশি দাম দিতে রাজি হয়নি।
যদিও ঈদ সামনে রেখে বেশি প্রবাস আয় আসছে। পাশাপাশি নগদ ডলারও দেশে ঢুকছে। ফলে ঈদের আগে ডলারের বাজার অস্থির হওয়ার আশঙ্কা নেই।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকরা ডলারের খবর জানতে গতকাল অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে বেশি খোঁজখবর নিয়েছেন। খোলাবাজারে খানিক চাপ দেখা গেছে। কেউ কেউ বাড়তি মুনাফার আশায় ডলার মজুত করার পরিকল্পনা করছেন বলে শোনা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোতে ৫ কোটি ডলারের নগদ মুদ্রা মজুত আছে। এসব ডলার তাঁরা সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা দামে বিক্রি করছেন। ব্যাংকগুলো এখন সবার কাছে ডলার বিক্রি করছে। তাই গ্রাহকরা যাতে বাজার থেকে বেশি দামে ডলার না কেনেন, এমন পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব কর্মকর্তা।
তবে খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারগুলোতে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা দেখা গেছে। সকালে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৪ টাকা ৭০ পয়সায়, যা বিকালে বেড়ে ১২৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর পর থেকে বাজার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কর্মকর্তাদের শীর্ষ ব্যাংকগুলোতে পাঠিয়ে বাজার তদারক করা হচ্ছে। পাশাপাশি খোলাবাজারেও তদারকি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বুধবারই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রয়োজন অনুযায়ী হস্তক্ষেপ করবে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদের আগে রেমিট্যান্স তথা প্রবাস আয়ের ইতিবাচক প্রভাব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারির কারণে ডলারের বাজার আপাতত স্থিতিশীল দেখা যাচ্ছে। খোলাবাজারে বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও সতর্ক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে নগদ ডলার বিক্রি বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে। তবে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) বিল পরিশোধের পর এখন রিজার্ভ আছে ২০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।