মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহসভাপতি মো. রিপনুল হাসানকে গ্রেপ্তার করায় চরম ক্ষুব্ধ দেশের ব্যবসায়ীরা। অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আহ্বান করে বাজুস। গতকাল সারা দেশে জুয়েলারি দোকান বন্ধ রাখা হয়। তবে ঈদ উপলক্ষে সাময়িকভাবে ধর্মঘট কর্মসূচি আজ থেকে স্থগিত করা হয়েছে।
গতকাল রাতে বাজুসের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ২৮ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর তাঁতীবাজারে নিজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করেন। পুলিশ ওই মামলায় যে রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করেছে তিনি ওই পদে কখনই ছিলেন না। এমনকি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জরিত নন। এ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যপদ কোনো দিনও গ্রহণ করেননি রিপনুল হাসান। তাই ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, শিল্প উপদেষ্টা, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বাজুস। পাশাপাশি আসন্ন ঈদুল আজহা ও সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় অনির্দিষ্টকালের বন্ধ কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ থেকে সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা থেকে রিপনুল হাসানের নাম প্রত্যাহার ও ন্যায়বিচার না পেলে পরবর্তীতে কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে বাজুস।
এদিকে রিপনুল হাসানকে পাঁচ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অন্য ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা সরকারের কাছে এ হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে রিপনুল হাসানকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। গত বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে বাজুসের ডাকে ঢাকাসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণার অংশ হিসেবে গতকাল দেশের জেলায় জেলায় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। পরে আসন্ন ঈদুল আজহা ও সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় অনির্দিষ্টকালের বন্ধ কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজুস। এ কারণে মালিকদের আজ থেকে সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা থেকে রিপনুল হাসানের নাম প্রত্যাহার ও ন্যায়বিচার না পেলে পরবর্তীতে কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে বাজুস।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে তাঁতীবাজার এলাকায় কোনো জুয়েলারি দোকান খোলা হয়নি। ব্যবসায়ীরা তাদের সব ধরনের কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট এলাকা, বসুন্ধরা সিটি, মিরপুর, উত্তরা, গুলশানসহ রাজধানীর সব মার্কেটে বন্ধ রাখা হয় জুয়েলারি দোকান। দেশের বিভিন্ন জেলায় একই কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, সিলেটসহ সব জেলায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পাশাপাশি রিপনুল হাসানকে মুক্তি দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তাঁতীবাজার এলাকা থেকে রিপনুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এর পর বাজুস সারা দেশে জুয়েলারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। তার অংশ হিসেবে গতকাল সারা দেশে এ কর্মসূচি পালিত হয়। রিপনুলের গ্রেপ্তারের পর বাজুস এক বিবৃতিতে দাবি করে, এসব মামলা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। সংগঠনটি তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দেশের সব জুয়েলারি দোকান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংগঠনের সহসভাপতি মো. রিপনুল হাসানকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। গতকাল বাজুস জানায়, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জুয়েলারি দোকান বন্ধ রয়েছে। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা এ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন।
রিপনুল হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ডে : বাজুস সহসভাপতি মো. রিপনুল হাসানকে পাঁচ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। রিপনুল হাসানের আইনজীবী পল্লব বাড়ৈ তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
শুনানিতে পল্লব বাড়ৈ বলেন, ‘আসামির রাজনৈতিক কোনো পদপদবি নেই। রিমান্ড আবেদনে আসামির রাজনৈতিক যে পরিচয় দেখানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়া। পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ পদ সৃষ্টি করেছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। পল্লব বাড়ৈ বলেন, মামলার এজাহারের ঘটনার সঙ্গে আসামির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই ভিকটিমকে হত্যার চেষ্টা করেননি। ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন না এবং অন্য কাউকে সহায়তাও করেননি। তার রিমান্ড বাতিল করে যে কোনো শর্তে জামিনে মুক্তি দিলে তিনি পলাতক হবেন না। আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন।