সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলো যে বিশেষায়িত কমিটি গঠনে একমত হয়েছে, সে কমিটির অপেক্ষায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিটি গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন বা সরকারের নির্দেশনা পেলে নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। কমিশনের আন্ডারে টেকনিক্যাল কমিটির মতো একটা কমিটি হবে। তারা (বিশেষায়িত কমিটি) মিলে যা করবে, কমিশন সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখন আমাদের কাছে কোনো রূপরেখা নেই যে, কাকে নিয়ে করতে হবে। আমরা অপেক্ষা করছি সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো পরবর্তী নির্দেশনা আসে কি না!
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ গত বুধবার জানিয়েছেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে বিশেষায়িত কমিটি গঠনের বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে। সে কমিটি গঠনে সরকারের কাছ থেকে এখনো কোনো পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা আসেনি বলে জানিয়েছে ইসি। এর আগে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সীমানা নির্ধারণে ইসির পরিবর্তে ‘একটি সীমানা নির্ধারণ কমিশন’ করতে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করেছিল। সেখানে বলা হয়, আলাদা কমিশন গঠন না করা পর্যন্ত ইসির সহায়তায় একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠন করা; যেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাচন কর্মকর্তা, ভূগোলবিদ, মানচিত্রকার, পরিসংখ্যানবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, তথ্য প্রযুক্তিবিদ, জনসংখ্যাবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ কাজে দেশি-বিদেশি যে কোনো ব্যক্তি, সংস্থারও পরামর্শ নিতে পারে ইসি। সংস্কার কমিশন এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়াও প্রস্তাব করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্য কোনো নির্বাচন কমিশনারকে প্রধান করে এ বিশেষায়িত কমিটি হবে। সীমানা নির্ধারণের পদ্ধতি তুলে ধরে বলা হয়, কমিশন বা বিশেষায়িত কমিটি প্রস্তাবিত এলাকা প্রকাশের পর আপত্তি নিয়ে জেলা পর্যায়ে শুনানি নিয়ে চূড়ান্ত তালিকা গেজেটে প্রকাশ করবে।
অধ্যাদেশ দ্রুত সংশোধনের তাগিদ : অধ্যাদেশ দ্রুত সংশোধন এবং অধ্যাদেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশন যাতে কাজ শুরু করতে পারে; তার প্রস্তুতির তাগিদ দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আবদুল আলীম। তিনি বলেন, এখন দুটি কাজ সামনে। এটা দুটি জিনিসের ওপর নির্ভর করবে। একটা হচ্ছে ওই অধ্যাদেশটা খুব দ্রুত করে ফেলা এবং তারপর নির্বাচন কমিশনকে খুব দ্রুত বিশেষায়িত কমিটি করে কাজ শুরু করে দেওয়া। এই দুটি কাজ করলে আমার কাছে মনে হয় যে (সীমানা নির্ধারণ কাজ) ঝুলে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, অক্টোবরের মধ্যে বিশেষায়িত কমিটির কাজ শেষে চূড়ান্তভাবে সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব। আর সেটি হলে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনি প্রস্তুতি শেষ করা যাবে। প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করে থাকে ইসি। এ খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তি শুনানি শেষে চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এখনো কোনো খসড়া প্রকাশ করেনি ইসি। তবে ইতোমধ্যে ৭৫টি আসনের বিষয়ে ৬০৭টির বেশি আবেদন এসেছে, যা নিয়ে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। গত ১২ মে জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এখন সেই অধ্যাদেশও সংশোধনের কথা বলছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বুধবার বলেছিলেন, দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানে যে ঐকমত্য হয়েছে তা হলো- প্রতি আদম শুমারির অনধিক ১০ বছর পরে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের দফা ১(গ) শেষে আইনের দ্বারা একটি বিধান যুক্ত করা। এর অর্থ হচ্ছে সংসদীয় আসন নির্ধারণ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা।
এ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণের আইন ২০২১, যেটা ২০২৫ সালে সংশোধিত হয়েছে, আমরা সংবিধানে কিছু বিষয় যুক্ত করার কথা বলেছি। তার পাশাপাশি সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য কমিটির পরিধি ও কার্যপরিধি গঠন নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইনের কথা বলেছি।