গত কয়েকদিনে যৌথ বাহিনীর টানা অভিযানে কোম্পানীগঞ্জ, সদর, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৪ লাখ ঘনফুট সাদাপাথর জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ সাদা পাথর। পাথর লুটের ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক বাদী হয়ে অজ্ঞাত দেড় হাজার জনকে আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ গতকাল অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল পয়েন্টের বিভিন্ন ক্রাসার মিল ও পার্শ্ববর্তী মহালদিক গ্রাম থেকে প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াতের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী ধোপাগুলের বিভিন্ন ক্রাসার মিল ও স্টকইয়ার্ডে অভিযান চালিয়ে প্রায় দেড় লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করে। পরে সদর উপজেলার মহালদিক গ্রামে অভিযান চালায় প্রশাসন। ওই গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও রাস্তার পাশে রাতের আঁধারে মজুত করা আরও প্রায় ১ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশিদ জানান, ধোপাগুল পয়েন্ট ও মহালদিক গ্রামসহ চারটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত পাথর ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র ও ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ফেলা হবে। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে লুকিয়ে রাখা আড়াই হাজার ঘনফুট সাদা পাথর জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হাবীব বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দেড় হাজারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান। মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ‘কিছু দুষ্কৃতকারী গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধ ও অননুমোদিতভাবে কোটি কোটি টাকার পাথর লুটপাট করেছে মর্মে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন, তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে মামলায় সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাদা পাথর লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫ : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ থেকে সাদা পাথর লুট ও চুরির ঘটনায় আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এনিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়জনে। শনিবার সকালে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- কোম্পানীগঞ্জের কালাইরাগ গ্রামের মোহাম্মদ কামাল মিয়া ওরফে পিচ্চি কামাল, একই গ্রামের মো. আবু সাঈদ, নাজিরেরগাঁও এলাকার মো. আবুল কালাম এবং লাছুখালের ইমান আলী ও একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। তাদের সাদা পাথর লুটের ঘটনায় খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর আগে কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেলা প্রশাসনের বক্তব্য : সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জানান, গতকাল দুপুর পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি ও বালু চাপা দিয়ে লুকিয়ে রাখা প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত পাথরগুলো সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও লুণ্ঠিত পাথর উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।