নানান চ্যালেঞ্জে পিছিয়ে আছে বহুমুখী সম্ভাবনাময় খাত হালাল পণ্যের বাজার। বিশ্ববাজারে এ পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ এ বাজারে পিছিয়ে আছে। বিশ্ব হালাল পণ্যের বাজার ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৩৪ সালে এটি ৯ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারে ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বে এ বাজার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। মুসলিম দেশের পাশাপাশি অমুসলিম দেশেও এ বাজার বাড়ছে। এ বাজারে বাংলাদেশের অবদান ৮৫০ মিলিয়ন ডলার।
হালাল পণ্যের আন্তর্জাতিক মান বজায় না রাখা, লজিস্টিক অবকাঠামোর স্বল্পতা, শুল্কহার ও সার্টিফিকেট প্রাপ্তির জটিলতা, আধুনিক পরীক্ষাগারের অপ্রতুলতা, দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনশক্তির অভাব নানা চ্যালেঞ্জে এ খাত পিছিয়ে আছে। সম্ভাবনাময় এ বাজার ধরতে সমন্বিত সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা ও হালাল পণ্যের ইকোনমিক জোন চান উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তারা জানান, বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিএসটিআই দুটো প্রতিষ্ঠান হালাল পণ্যের সনদ প্রদান করে, যা অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে। পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের হালাল পণ্যের ইতিবাচক ইমেজের অভাব এবং সমন্বিত নীতিমালার অনুপস্থিতিতে এ খাত পিছিয়ে আছে। এজন্য দেশের হালাল সার্টিফিকেটের বৈশ্বিক স্বীকৃতিপ্রাপ্তির লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগার স্থাপনের জন্য সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী গতকাল রাজধানীতে এক সেমিনারে বলেন, হালালশিল্পের বিশাল সম্ভাবনাময় হলেও বাংলাদেশ একাধিক কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ থাকায় এ খাতের বিকাশ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। দেশের হালাল সার্টিফিকেটের বৈশ্বিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন করা প্রয়োজন।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলোজির (আইইউবিএটি) মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মমিনুল ইসলাম গতকাল একই সেমিনারে বলেন, বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিএসটিআই দুটো প্রতিষ্ঠান হালাল পণ্যের সনদ প্রদান করে, যা অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে। পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের হালাল পণ্যের ইতিবাচক ইমেজের অভাব, সমন্বিত নীতিমালার অনুপস্থিতি এ খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ড. মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী গতকাল সেমিনারে বলেন, বাংলাদেশে হালাল সার্টিফিকেট প্রদানে সরকারের একক কোনো প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নেই, তাই সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সনদ প্রদান করা হচ্ছে।
বিডার মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক বলেন, এলডিসি-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি সম্প্রসারণে সম্ভাবনায় হালাল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং হালাল খাতের উন্নয়নে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। হালাল পণ্যের উন্নয়নে একক বডি দরকার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক বেবী রাণী কর্মকার বলেন, হালাল পণ্যে এখন লাইফ স্টাইল। এ পণ্যে এখন মুসলিম দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইউরোপে এ বাজার বড় হচ্ছে। বিশ্বের ১৮০টি দেশে হালাল পণ্যের চাহিদা রয়েছে। হালালের বৈশ্বিকবাজার প্রতি বছর প্রায় ১২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।