গরিবের প্রোটিনখ্যাত পণ্য হিসেবে ডাল বেশ পরিচিত। চাহিদার তুলনায় কয়েক বছর আশঙ্কাজনকভাবে ডালের উৎপাদন কমেছে। এতে বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা। দুই বছরের ব্যবধানে ডালের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ডাল আমদানি হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে দিনদিন কৃষি জমি কমছে। তা ছাড়া ডালের আবাদ ঝুঁকিপূর্ণ। যথাযথ প্রযুক্তি না থাকায় ডালের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ফসল চাষ থেকে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কম খরচে বেশি লাভ- এমন ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছেন তারা। চলমান সংকটগুলো কাটিয়ে আধুনিক চাষাবাদমুখী পরিবেশ তৈরি হলে ডালের আবাদ বাড়বে। কমবে আমদানি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, ডালজাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় মসুর ডাল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে মসুর ডালের আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ২০ হাজার টন। তার আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টন। সে হিসাবে পাঁচ মাসে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মসুর ডাল আমদানি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই কেবল মসুর ডালের আমদানি ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, শেষ দুই অর্থবছরে সব ধরনের ডালের আমদানি বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকার ডাল আমদানি হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার আমদানি হয়েছিল। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চেষ্টায় ভ্যারাইটি এসেছে। একটা সময় সাফল্য এসেছে। তেলজাতীয় ফসলের জন্য যেভাবে কাজ করা হয়েছে, ডালজাতীয় ফসলের জন্য সেটা দেখিনি। আমদানি করা ডালের বিপরীতে দেশি ডালের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ায় কৃষকের আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গবেষণাও সীমিত। রোগবালাই প্রতিরোধের ক্ষমতা ও উচ্চ ফলনের মতো নতুন জাত না আসায় ডালের আবাদ কমে আসছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন ৪৫ গ্রাম ডালের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর মসুর, অ্যাংকর, ডাবলি, ছোলাসহ সব ধরনের ডালের চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। দেশে গড়ে উৎপাদন হয় সাড়ে ৮ লাখ টনের কম। প্রতিবছর প্রায় ৬৭ শতাংশ ডালের ঘাটতি থাকে। এটি পূরণে ১৭ থেকে ২০ লাখ টনের মতো ডাল আমদানি করতে হয়। অধিদপ্তরের উৎপাদন তথ্য বলছে, ২০২১-২২ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর (চার বছর) দেশে ডালের উৎপাদন আশঙ্কাজনহারে কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আট লাখ সাত হাজার ৮৩ টন ডালের উৎপাদন হয়েছে। চার বছরে ৫ শতাংশ উৎপাদন কমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আট লাখ দুই হাজার ২৫ টন ডালের উৎপাদন হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চাহিদা পূরণের জন্য আমদানি দোষের কিছু না। এটি নির্ভর করে ডলারের রিজার্ভের ওপর।