রাজধানীর খিলক্ষেতে দুটি মসজিদ ও একটি মন্দিরের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘নিয়মের বাইরে’ গিয়ে এমন নজির স্থাপন করল রেলওয়ে। গতকাল রেলভবনে এক অনুষ্ঠানে মসজিদ ও মন্দির পরিচালনা কমিটির কাছে বরাদ্দপত্র তুলে দেন ঢাকার বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার মো. মহিউদ্দিন আরিফ।
বরাদ্দপ্রাপ্ত মসজিদ ও মন্দিরের মধ্যে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার জোয়ারসাহারা মৌজায় খিলক্ষেত রেলওয়ে জামে মসজিদের জন্য ৮ হাজার ৭৬০ বর্গফুট, একই মৌজায় আন-নূর-জামে মসজিদের জন্য ২ হাজার ৪০৫ বর্গফুট এবং খিলক্ষেত থানার একই মৌজায় খিলক্ষেত সর্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দিরের জন্য ২ হাজার ৪৫০ বর্গফুট জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্ধারিত প্রতীকী মূল্যের বিনিময়ে এসব জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারসহ সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, মসজিদ ও মন্দিরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট সব ধর্মেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কথা বলা হয়েছে। কেউ এ সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করলে তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ রেল কর্মচারীদের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজার আগে অস্থায়ীভাবে ওই ম পটি করা হয়েছিল। পূজার পরে সেগুলো সরানোর কথা থাকলেও সরানো হয়নি। পরে তা উচ্ছেদ করে রেলওয়ে। ম প না সরানোর কারণ জানতে চাইলে মন্দির কমিটির নেতারা জানান, তাঁরা সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রেলের কিছু কর্মচারী সরাতে দেননি। তাঁরা টাকার বিনিময়ে মন্দিরের জন্য জমি দিতে চেয়েছিলেন। কতটা দুর্নীতি ঢুকে গেছে আমাদের মধ্যে! এরপর আমি মন্দিরের জন্য স্থায়ী জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘আইনে রেলের জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিধান নেই। বিশেষ বিবেচনায় রেলপথ উপদেষ্টা রেলওয়ের জমি মসজিদ ও মন্দিরকে বরাদ্দ দিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। ধর্মীয় উপাসনালয়ের পবিত্রতা যারা নষ্ট করতে চায়, তারা দুর্বৃত্ত। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার রেলওয়ের এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বরাদ্দপত্র হস্তান্তর শেষে একটি প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিফিং শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।