জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা, পক্ষপাতিত্বসহ ১৬টি অনিয়মের অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৩৩ বছর পর আয়োজিত জাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাট আগ্রহ সৃষ্টি করলেও বাস্তবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও বিতর্কিত। নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই অব্যবস্থাপনা, পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত, জনবল ঘাটতি ও স্বচ্ছতার ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার পুরো ঘটনাপ্রবাহ থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে একটি নির্দিষ্ট পক্ষকে বিজয়ী করার লক্ষ্যেই নির্বাচন পরিচালিত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী, প্রার্থী, শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের আস্থা নষ্ট হয়েছে। ওএমআর যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্তকেও প্রশাসনের ব্যর্থতা আখ্যা দিয়ে শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, বিপুল অর্থ ব্যয় করেও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারা লজ্জাজনক। এতে একদিকে নির্বাচনের ফলাফল বিলম্বিত হয়েছে, অন্যদিকে ফলাফলকে ঘিরে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে জাকসুর নির্বাচন প্রক্রিয়ার ১৬টি গুরুতর অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট; নির্বাচনের ৪ দিন আগে ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল; নির্বাচনের দুই দিন আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট; নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স হলে হলে পাঠানো; প্রথমে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট রাখতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও নির্বাচনের আগের দিন রাত আড়াইটায় পোলিং এজেন্ট রাখার সিদ্ধান্ত প্রার্থীদের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি করে; ভোট কেন্দ্রে প্রার্থী ও ছাত্রীদের হল পরিদর্শনে সাংবাদিকদের ঢুকতে বাধা দেওয়া; নির্ধারিত ভোটারের চাইতে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ; অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ায় ভোট কারচুপির শঙ্কা; ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় বৈধ শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও ভোট দিতে না পারা এবং জাল ভোটের প্রমাণ পাওয়া; কোনো কোনো হলের একাধিক প্রার্থীর নাম ছাপা না হওয়া বা কয়জন সদস্যকে ভোট দিতে হবে সেই নির্দেশনায় ভুল অঙ্ক লেখা থাকা; নির্ধারিত সময়ে সব হলে ভোট প্রদান শেষ না হওয়া; ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনায় প্রশ্ন ওঠায়, হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্তের পর বাস্তব পদ্ধতি অনুসরণ না করা; নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ৩ শিক্ষকের সরে যাওয়া; কারচুপির অভিযোগে ৮টি প্যানেলের মধ্যে ৫টির নির্বাচন বর্জন করা; ক্যাম্পাসে সব খাবার দোকান ও চা-এর দোকান বন্ধ রেখে ক্যাম্পাসের উৎসবমুখর পরিবেশকে দমবদ্ধ দশায় পরিণত করা হয়। নির্বাচনের দিন দুপুরের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গেটে জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী, নির্বাচন কমিশন তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বাসিন্দার ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে দেখা যায়; সর্বশেষ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে ৫ জনের নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে ২ জন পদত্যাগ করলেও বাকি ৩ জন কমিশনারের স্বাক্ষরে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা।