দেশের আর্থিকসহ প্রতিটি খাতে বাড়ছে সাইবার হামলা ও হামলার ঝুঁকি। তথ্য বলছে, সাইবার হামলা থেকে রক্ষা করতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে ৫৩ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতি বছর তারা বিনিয়োগ করেছে গড়ে ২ হাজার কোটি টাকা। তার পরও সাইবার হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে ৩৬ শতাংশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় জড়িতদের ৪০ শতাংশ ব্যাংকার, তথ্য ও প্রযুক্তি অভিজ্ঞ ৪০ শতাংশ, হ্যাকার ১৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ৫ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলো সফটওয়্যার ও টুলস ক্রয়ে বিনিয়োগ করলেও পরবর্তীতে এসব রক্ষণাবেক্ষণে আর বিনিয়োগ করতে চান না। বিনিয়োগের জন্য অবশ্য নানা রকম জটিলতাও রয়েছে। ব্যাংকগুলোর পর্ষদের অনুমতি ছাড়া কোনো বিনিয়োগ করা যায় না। তথ্যানুসারে, দেশের ব্যাংকগুলোয় দিনে ১৪৫ থেকে ৬৩০ বার সাইবার হামলা হয়। সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে চীন থেকে, ২৪ শতাংশ। এরপর উত্তর কোরিয়া থেকে ১৩ শতাংশ, রাশিয়া থেকে ১২ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭ শতাংশ, পাকিস্তান থেকে ৭ শতাংশ, তুর্কি থেকে ৫ শতাংশ, রোমানিয়া থেকে ৫চ শতাংশ, বুলগেরিয়া থেকে ৪ শতাংশ, ভারত থেকে ৩ শতাংশ, হাঙ্গেরি থেকে ৩ শতাংশ, তাইওয়ান থেকে ৩ শতাংশ, ব্রাজিল থেকে ২ শতাংশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ১২ শতাংশ সাইবার হামলা হয়। এ ছাড়া দেশের ভিতর থেকেই ব্যাংকগুলোতে ২ শতাংশ সাইবার হামলা হয়ে থাকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাইবার হামলা ঠেকাতে প্রতিনিয়ত সফটওয়্যার হালনাগাদ করতে হবে। গ্রহণ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, আক্রমণের ধরনে পরিবর্তন আসে, তার পর আমাদের ডিভাইসগুলো পরিবর্তন হয়। এখন যেসব ব্যাংকের মুনাফা ভালো হয়, তারা এ হামলা মোকাবিলায় অনেক বিনিয়োগ করে। বিআইবিএম বলছে, সাইবার হামলার মধ্যে ৬৮ শতাংশ ম্যালওয়্যার, ডেনিয়াল অব সার্ভিস ৪৮ শতাংশ, ফিসিং ৪৮ শতাংশ, স্প্যাম ৪৬ শতাংশ, এসকিউএল ইনজেকশন ২৮ শতাংশ, র্যানসমওয়্যার ২৬ শতাংশ, নেটওয়ার্ক হ্যাকিং ২৪ শতাংশ, থিফট অব হার্ডওয়্যার ১২ শতাংশ, ব্র্যার্ন্ড ৯ শতাংশ, করপোরেট ইসপিওনেজ ৮ শতাংশ। সাইবার হামলা ঠেকাতে প্রতিদিন চর্তুমুখী ফলোআপের পরামর্শ দিয়েছে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। সুমন আহমেদ সাবির বলেন, বড় ধরনের সাইবার হামলা হয় ইনসাইড থেকে। সেটা ব্যাংকের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের লোকও হতে পারে আবার অন্য কর্মকর্তাও হতে পারেন। এ জায়গাটায় ভালো চর্চা নিয়ে আসা জরুরি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সাইবার হামলা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া আছে।’