‘টোক’ বাংলার সুলতানি আমলের ইতিহাসবিখ্যাত স্থান। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে সেই টোক ইউনিয়নের একটি গ্রাম সুলতানপুর। সেখানে রয়েছে ৬০০ বছরের পুরোনো এক ঐতিহ্যবাহী শাহি মসজিদ। বর্তমানে এটি ‘সুলতানপুর দরগাপাড়া শাহী জামে মসজিদ’ নামে পরিচিত। এক গম্বুজবিশিষ্ট আদি মসজিদের মূল স্ট্র্যাকচার নির্মিত হয়েছিল সুরকি ও ইটের সংমিশ্রণে। আদি মসজিদের ভিতর মাত্র অর্ধশত মানুষ নামাজ পড়তে পারত। মসজিদের মূল স্ট্র্যাকচারে অস্পষ্টভাবে খোদাই করে লেখা আছে ১৩৪৬। বর্তমানে একসঙ্গে ৫ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে। তবে সংস্কারের ফলে হারিয়ে গেছে এর প্রাচীন সৌন্দর্য। লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ঢাকা পড়েছে প্রাচীন মসজিদের মূল গম্বুজটি। গম্বুজ ও মূল স্ট্রাকচার ঠিক রেখে ১৯৮৭ ও ২০১২ সালে মসজিদটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়।
জানা যায়, ইসলাম প্রচারের জন্য হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর সঙ্গে আসা ৩৬০ জন অলি-আউলিয়ার মধ্যে ১৩১তম শাহ সুলতান গাজীপুরের টোকে এসেছিলেন। যাঁর নামানুসারে কাপাসিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় এ গ্রামটির নামকরণ হয় ‘সুলতানপুর’। জনশ্রুতি আছে, মসজিদটি গায়েবি। তাই প্রাচীনকাল থেকেই দূরদূরান্তের লোকজন আসে দানখয়রাত ও মানত করতে। অনেকে মনে করেন স্বাধীন সুলতানি আমলে মসজিদটি নির্মিত। আবার অনেকে মনে করেন মোগল আমলেই মসজিদটি নির্মিত হয়। সম্রাট আকবরের সময় ঈশা খাঁ ও মানসিংহের যুদ্ধকালে মসজিদটি নির্মাণ হয় বলে দাবি করেন তাঁরা।
মোগল আমলে প্রতিষ্ঠিত শাহি মসজিদটি দেখতে, নামাজ পড়তে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে ধর্মপ্রাণ মানুষ। কথা হয় মসজিদসংলগ্ন দোকানদার মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট সময় থেকে এ মসজিদের কথা শুনতেছি। এখানে মানত ফলে বলে মানুষের বিশ্বাস।’ প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ এ মসজিদে নামাজ পড়তে ও বিভিন্ন ধরনের মানত নিয়ে আসে।
মুসল্লিরা কোরআন শরিফ, মোমবাতি, আগরবাতি, টাকাপয়সা, মুরগি, ছাগল দান করেন মসজিদে। ঐতিহ্য ধরে রেখে এখানে রয়েছে কবরস্থান। এলাকার যাদের কবর দেওয়ার মতো জায়গা নেই, তাদের কবরস্থ করা হয়। মসজিদ কেন্দ্র করে পাশেই নির্মিত হয়েছে সুলতানিয়া দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা। এ মাদরাসায় এতিম, গরিব ছাত্রদের থাকাখাওয়া ফ্রি। বর্তমানে মাদরাসায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
মসজিদ ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মাহমুদুল আলম নজরুল বলেন, ‘মোগল আমলে স্থাপিত হওয়ায় এটি এলাকার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। এখানে পাঁচজন অলি-আউলিয়ার কবর রয়েছে। মসজিদের মূল ভবনের জায়গা সংকীর্ণ ছিল, পরে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা ও দানের টাকায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মসজিদে প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫-৬ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে আসে। তারা বিভিন্ন প্রকার দানসদকা করে দোয়াপ্রার্থী হয়।
মুসল্লির সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জায়গাসংকুলান হয় না। তারা মাঠে ও ছাদের ওপরে নামাজ আদায় করে। আর্থিক সংকটের কারণে মসজিদের তিন তলার কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। তাই সরকারি কোনো অনুদান পেলে মসজিদ ও মাদরাসা আরও সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যেত।’ এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনীম বলেন, ‘মসজিদের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সাধ্যমতো বরাদ্দ দেওয়া হবে।’