ফসলের সুরক্ষায় বালাইনাশক (পেস্টিসাইড) ব্যবহারে এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। তবে এটির ব্যবহারে ফসলের সুরক্ষার চেয়ে দেশের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া বালাইনাশকের বিষে নীল হচ্ছে পরিবেশ ও মানুষ। স্বল্প মেয়াদে চোখে জ্বালাপোড়া, চুলকানি, অ্যালার্জি এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে কিডনি, হার্ট ও ফুসফুসের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই পেস্টিসাইড।
কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ক্রমাগতভাবে পেস্টিসাইডের ব্যবহার বেড়েছে। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সব থেকে বেশি ৪০ লাখ ৮৩ হাজার টন পেস্টিসাইডের ব্যবহার হয়েছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৭ লাখ ৪২ হাজার টন এবং পরের বছরে ব্যবহার হয়েছে ৩৯ লাখ টন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বালাইনাশকের ব্যবহার অতিমাত্রায় বাড়ায় পরিবেশ ও মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা মরণঘাতী ব্যাধিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীটনাশক পানে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। পাশাপাশি পেস্টিসাইড মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, তরল ও গুঁড়া বালাইনাশকের প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। ১৯৭২ সালে দেশে চার হাজার টন বালাইনাশকের ব্যবহার ছিল; ১৯৮০ সালে তা ছিল পাঁচ হাজার টন। ২০০০ সালে তা আট হাজার টনে দাঁড়ায়। প্রায় দুই দশকের ব্যবধানে এর ব্যবহার অস্বাভাবিক বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টনে। বালাইনাশক আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয়, বিতরণ এবং ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বালাইনাশক (পেস্টিসাইডস) আইন, ২০১৮ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয় সরকার। সূত্র বলছে, আগামী অক্টোবরে এর প্রজ্ঞাপন হবে। এ আইন বাস্তাবায়িত হলে দেশে বালাইনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আসবে।
উদ্ভিদ সংরক্ষণ ইউং-এর উপপরিচালক (বালাইনাশক ও মান নিয়ন্ত্রণ) কাজী শফিকুল ইসলাম বলেন, বালাইনাশক আইন ২০১৮ চূড়ান্ত হয়েছে। চলতি মাসে রিভিউ হওয়ার পর যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি হবে। এতে আমরা সব থেকে বেশি জোর দিয়েছি বালাইনাশকের মান নিয়ন্ত্রণে। এটি বাস্তবায়ন হলে পেস্টিসাইট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সেন্টার ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল (সিএবিআই) তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পেস্টিসাইট ব্যবহারকারী রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। পেস্টিসাইট ব্যবহারের ফলে জন্মগত ত্রুটি, প্রজনন ক্ষতি, ইমিউনোটক্সিসিটি এবং বিকাশগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। সম্প্রতি ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক আবদুল মুঈদ এক সেমিনারে বলেন, ‘আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে স্বাস্থ্যের বিষয়টিও দেখতে হবে। কীটনাশক স্প্রে করতে গিয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষক। বর্তমানে ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৪ শতাংশই কৃষক।’