চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ ৪১ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে তা কার্যকর না করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সহনীয় পর্যায়ে রেখে ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণেরও দাবি তুলেছেন তারা। বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত সমন্বয় সভায় আমদানি ও রপ্তানি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এসব দাবি জানান। দাবি মানা না হলে প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চাইবেন বলে জানিয়েছেন তারা। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক আমিরুল হক, বিজিএমইএর বর্তমান প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান, প্রাক্তন প্রথম
সহসভাপতি এম এ সালাম ও নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী, বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি মাহবুব চৌধুরী, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, বারভিডার সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর প্রমুখ। সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর একটি সেবা খাত। এটি কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। তার পরও বন্দর কখনো লোকসানের মুখ দেখেনি। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করছে। ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়লে এ বন্দর হবে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল বন্দর। আমদানি-রপ্তানি ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প। খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে। তখন বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেবে। বিকল্প বাজার খুঁজবে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে তৈরি পোশাকশিল্প। কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে ভোক্তা পর্যায়ে। বেড়ে যাবে দ্রব্যমূল্য। ব্যবসায়ীদের মতামত ছাড়াই বর্ধিত ট্যারিফ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, অযৌক্তিক ট্যারিফ আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ। আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুনভাবে নির্ধারণ করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে যাব। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করব। যেন প্রত্যেক স্টেকহোল্ডারকে ডেকে তাদের মতামত নিয়ে ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এটা না হওয়া পর্যন্ত বর্ধিত ট্যারিফ কার্যকর করা যাবে না। বন্দর পরিচালনা কমিটিতে একজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি রাখতে হবে। আমিরুল হক বলেন, ‘বর্ধিত ট্যারিফ আমরা দেব না। দেশের মানুষকে তা দিতে হবে। তাই ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জনস্বার্থবিরোধী। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা না বলে কেউ ট্যারিফ নির্ধারণ করতে পারবে না। বন্দর কারও বাবার নয়। এটা জনগণের সম্পদ।’