আধিপত্য বিস্তার ও বৃদ্ধ মায়ের লাশ দেখতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ভোরে সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নাসিরউদ্দন (৬৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। নিহত নাসির ওই গ্রামের মৃত মইজ উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় দাঙ্গাবাজরা অগ্নিসংযোগ ও বেশ কিছু বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের খাঁ বাড়ির সাবেক চেয়ারম্যান হারুন মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের সাবুদের গোষ্ঠীর সাচ্চু গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। যা এর আগে কয়েকবার রূপ নেয় সংঘর্ষে। তবে গতকাল সকালের সংঘর্ষের ঘটনা ছিল অন্য কিছু। মূলত গতকাল সাবুদের গোষ্ঠীর মৃত হাসিম মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মৎ বেগমের মৃত্যু হয়। তার ছয় ছেলে সন্তানের মধ্যে দুজনকে লাশ না দেখিয়ে দাফন করা হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যাওয়া মোসাম্মৎ বেগমের ছয় ছেলের মধ্যে বড় চার ছেলে নোয়াব মিয়া, আবদুল হক, ফজলুল হক ও শহিদুল হক দীর্ঘদিন ধরে নিজ গোষ্ঠী সাবুদের বাড়ি ছেড়ে খাঁ বাড়ির সাবেক চেয়ারম্যন হারুন মিয়ার পক্ষ নেন এবং অন্য ছোট দুই ছেলে জহিরুল হক ও নুরুল হক নিজ গোষ্ঠী সাবুদের বাড়ির পক্ষে থাকেন। কিন্তু শুক্রবার মোসাম্মৎ বেগমের মৃত্যুর পর তার লাশ ছোট ছেলে নুরুল হককে না দেখিয়ে দাফন করা হয়। এ নিয়ে সন্ধ্যায় উভয়পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরই জের ধরে গতকাল সকালে দুই পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন মাথায় হেলমেট, পায়ে ক্রিকেট খেলার প্যাড লাগিয়ে টেঁটা, বল্লমসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষের সময় সাচ্চু মিয়ার চাচা নাসির উদ্দিন প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর থেকে হামলার ভয়ে অনেকেই ঘরের মালামাল নিয়ে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পাড়ি দিচ্ছেন। সদর মডেল থানার ওসি আজহারুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালানের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষে ইন্ধনদাতা ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।