শিশুর জন্মের পরপরই তার কোনো দায়িত্ব থাকে না। যখন সে বড় হয়ে ওঠে তখন তাকে অনেক কিছুর দায়িত্ব নিতে হয়। এই দায়িত্ব নেওয়ার প্রক্রিয়াটি হতে হয় পর্যায়ক্রমিক। অথচ অনেক বাবা-মা আছেন যাঁরা তাঁদের সন্তানকে 'আদর' করে কোনো কাজ করতে দেন না বা দায়িত্ব নিতে দেন না। ভাবেন, এখন করতে হবে না বড় হয়ে করবে। এমনকি অনেকে ১৪-১৫ বছরের সন্তানকেও প্রতি বেলায় মুখে তুলে খাইয়ে দেন।
এই সন্তান যখন বড় হয়ে যায়, হঠাৎ আবিষ্কার করে যে তাকে অনেক কিছুর দায়িত্ব নিতে হবে। যার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক দক্ষতা ও চাপ নেওয়ার ক্ষমতার কোনোটিই তার নেই। ফলে তার মধ্যে প্রচণ্ড মানসিক চাপ পড়ে, রাগ হয় এবং দায়িত্ব এড়ানোর জন্য অনেকে বিপথে চলে যায়। তাই সন্তানকে প্রথম থেকেই তার বয়স উপযোগী দায়িত্ব নিতে শেখাতে হয়।
নিজেই হয়ে উঠুন আদর্শ
শিশুরা মূলত তিনভাবে দায়িত্ব নিতে শেখে। প্রথমত বড়দের কাউকে দায়িত্ব পালন করা দেখে শেখে, দ্বিতীয়ত ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব পাওয়া ও তা পালন করার মাধ্যমে শেখে এবং তৃতীয়ত তারা কোনো কাজ করতে গিয়ে ভুল ও সংশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেখে। তাই তাদের সামনে দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে আদর্শ ব্যক্তি হয়ে উঠুন। তাতে আপনার সন্তান দেখে দায়িত্ব পালন শিখতে পারবে।
দোষ না দিয়ে করতে বলুন
শিশুকে শেখানোর জন্য প্রতিদিনের সুযোগগুলো গ্রহণ করতে হয়। যেমন- কোনো শিশু একটি জিনিস ফেলে দিল তখন তাকে বলা 'সোনা, দেখো তো জিনিসটা পড়ে গেছে ওটা তুলে রাখো, না হলে ওটা নষ্ট হয়ে যাবে।' এভাবে তার দোষ না ধরে তাকে দিয়ে কাজটি করালে সে দায়িত্ব পালন করতে শিখবে।
ব্যক্তিগত কাজের দায়িত্ব
বয়স অনুযায়ী ধীরে ধীরে তার ব্যক্তিগত কাজগুলো করতে উৎসাহী করতে হবে। যেমন- নিজের জামা বা জুতা পরতে বলা, বই গুছিয়ে রাখতে বলা ইত্যাদি।
নেতিবাচক কাজের দায়িত্ব
অনেক সময় শিশু নিজে কোনো কিছু করে অন্যকে দোষারোপ করে। তাকে শান্তভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে সে যেটি করেছে সেটি তাঁর দায়িত্ব। অন্যরা যদি কিছু করে থাকে, তবে সেটি অন্যের দায়িত্ব। 'সবাই অন্য বাড়ির গাছে ঢিল মারছিল, তাই আমিও মেরেছি'- এমন কথায় তাকে বলতে হবে যে অন্যরা অন্যায় করেছে সেটা তাদের ব্যাপার কিন্তু তুমি ঢিল মেরেছ সেটার দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে, এমন কাজ আর করবে না।
বাসার কাজ ভালো না হলেও সমালোচনা নয়
অনেক শিশুই বাসার কাজে বাবা-মাকে সাহায্য করতে চায়। তাদের এই আগ্রহকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। ছোট ছোট কাজ তাকে করতে দেওয়া যায়। এ কাজটি হয়তো বাবা বা মা খুব সহজে অল্প সময়ে আরো ভালোভাবে করতে পারবেন। তবুও তাকে কাজটি করতে দিন। কাজটি ভালো হলো কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার কোনো একটি কাজের দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতা তৈরিই আসল উদ্দেশ্য।
টাকার অপব্যবহার না করা
স্কুলের শিশুদের হাতে স্বল্প পরিমাণ টাকা দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা টাকার ব্যবহার শিখতে পারে এবং একই সঙ্গে টাকা কিভাবে জমানো যায় তা শিখতে পারে। তাদের জমানো টাকা দিয়ে তাদের পছন্দমতো অথচ তাদের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন জিনিস কেনার স্বাধীনতা তাদের দিতে হবে।
সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা
সমাজকেও যে সবাই মিলে সুন্দর রাখতে হয়, সেটি সন্তানকে শেখানো প্রয়োজন। তাদের বলা যায়, আমরা সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজের দায়িত্বটি পালন করি, তবে সমাজ সুন্দর হয়ে যাবে। রাস্তায় কলার খোসা বা চকোলেটের কাগজ ফেললে দেখতে খারাপ লাগবে বা কেউ (বুড়ো দাদু) পড়ে যেতে পারে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে উৎসাহী করতে হবে। প্রতিবেশীদের ছোট ছোট কাজে সাহায্য করতে দিতে হবে।
এভাবে তাকে বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব নিতে শেখাতে হবে। একই সঙ্গে সময় মেনে লেখাপড়াসহ সব ধরনের কাজের মধ্যে কিভাবে সমন্বয় করা যায় তাও শিখতে দিতে হবে। এভাবে সে একদিন দায়িত্ববান পরিবারের সদস্য এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।