আমাদের দৈনন্দিন সময়ের এক তৃতীয়াংশ কেটে যায় ঘুমে। কিন্তু ঘুম নিয়ে আমাদের মাথাব্যথার শেষ নেই। কম ঘুমাবেন, নাকি বেশি ঘুমাবেন। ঘুম কম হওয়াতে ক্লান্ত হয়ে থাকেন অনেকেই। আবার ভালো ঘুম না হওয়াতেও অনেকের মধ্যে অবসাদ দেখা যায়। কারো মোটামুটি ১১ ঘন্টা ঘুম না হলে চলে না। আবার কেউ অল্প কয়েক ঘন্টার ঘুমেই দিব্যি সুস্থ থাকেন। কিন্তু এ ঘটনা বেশ বিরল। সমস্যা হলো, একই পরিমাণ ঘুম কারও জন্য যথেষ্ট আবার কারও জন্য কম। আসলে কার জন্য কতোটা ঘুম ভালো?
ঘুমের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো জেনে রাখলে আপনার মোটামুটি কতোক্ষণ ঘুমানো দরকার, তা বোঝা যেতে পারে। এই পাঁচটি বিষয় জেনে রাখলে নিজের ঘুমের প্যাটার্ন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
১) ডাক্তাররা সাধারণত সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমের উপদেশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু কেন এই সময় নির্ধারণ? কারণ বেশিরভাগ মানুষ এই পরিমাণ ঘুমিয়ে সুস্থ থাকেন। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দলে আপনার পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
২) দেহঘড়ি অনুযায়ী আপনার ঘুমের সময় নির্ধারণ
সবার দেহঘড়ি আলাদা নিয়মে চলে। মোটামুটি চার ধরণের নিয়ম বা ক্রনোটাইপ আছে। এক ধরণের মানুষ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে আর রাত জেগে থাকে। কেউ কেউ আবার একদম সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়েন আর জলদি ঘুমাতে যান। এই দুই ছাড়াও মাঝামাঝি- যারা ঘুম থেকে একটু দেরি করে ওঠে আর একটু দেরি করে ঘুমাতে যায়। এদের মাঝে একটি দল সকালে ও বিকালে ঝিমুনি অনুভব করে, অন্য দলটি সবসমই ফুরফুরে থাকে।
আপনি যদি সব সময়েই ক্লান্ত ও বিরক্ত অনুভব করতে থাকেন, তবে সম্ভবত আপনি নিজের দেহঘড়ি অনুযায়ী ঘুমাচ্ছেন না। নিজের ঘুমের সময় একটু অদলবদল করে দেখুন কোন সময়টি আপনার মানিয়ে যাচ্ছে।
৩) জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমাণ ঘুম
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ঘুম দরকার সাত থেকে নয় ঘন্টা। কিন্তু বাচ্চাদের ঘুম বেশি দরকার হয়, আর কিছু বৃদ্ধ মানুষের দরকার হয় কম। শুধু তাই নয় কখন ঘুমাতে যাবেন, কখন ঘুম থেকে উঠবেন এ ব্যাপারে অর্থাৎ ক্রনোটাইপেও আসে পরিবর্তন। বাচ্চারা সাধারণত বেশ সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। তরুণরা রাত জাগে আর ২০ বছর বয়সের পর সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস হয়ে যায়।
৪) ক্রনোটাইপ নিয়ন্ত্রণ
যদিও ক্রনোটাইপ এবং ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই জেনেটিক। তবে নিজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু কাজ করতেই পারেন। বিশেষ করে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়তে কিছু কৌশল কাজ করে। জানালার পাশে ঘুমালে সকালের রোদ ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করবে। একইভাবে রাত্রে ঘর অন্ধকার করে বসে থাকলে ঘুম আসবে সহজে।
৫) প্রত্যেকের ঘুমের প্রয়োজনীয়তা আলাদা
যত গবেষণাই হোক না কেন, সবার ঘুমের প্রয়োজনীয়তা এক নয়। ব্যক্তিবিশেষে তারতম্য থাকবেই। কিছুদিন নিজের শরীরের অনুভূতি অনুযায়ী ঘুমিয়ে দেখুন। যখন ক্লান্তি লাগে তখন ঘুমাতে যান, প্রাকৃতিকভাবে ঘুম ভেঙ্গে উঠুন। এ সময় এড়িয়ে চলুন ক্যাফেইন এবং ধূমপান। দিনের বেলায় কিছুটা রোদ গায়ে লাগান, আর ব্যায়ামও করুন পরিমিত। দেখবেন শরীর নিজস্ব নিয়মে একটা ঘুমের রুটিনে পড়ে গেছে। এ রুটিন অনুযায়ী, ঘুমালে কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। তবে এরপরও সমস্যা হতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫/ রোকেয়া।