কখনও পোলাওতে, কখনও পায়েসে৷কিংবা সন্দেশের উপর৷ ছোট্ট একটা কিসমিস মুখে পড়লেই স্বাদ যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়৷ কিন্তু এই ছোট্ট কিসমিসের এত উপকার জানলে অবাক হবেন৷
১। দুর্বলতা দূর করতে কিসমিসের জুড়ি নেয়। দেহে শক্তি সরবরাহ করতে কিসমিসের অবদান অনেক বেশি। কিসমিসে রয়েছে চিনি, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ, যা তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহ করে থাকে। তাই দুর্বলতার ক্ষেত্রে কিসমিস খুবই উপকারি।
২। বাচ্চারা ক্যান্ডি ও চকলেট খেয়ে দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু এগুলির পরিবর্তে বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করালে দাঁতের সুরক্ষা হবে। আবার একই স্বাদ পাওয়ার সাথে সাথে বিপুল পরিমাণ উপকারও পাবে। চিনি থাকার পাশাপাশি কিসমিসে রয়েছে ওলিনোলিক অ্যাসিড, যা মুখের ভেতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে বাঁধা দেয়।
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত করতে বেশ ভূমিকা পালন করে।
৩। কিসমিসে আরো রয়েছে বোরন নামক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস হাড়ের ক্ষয় এবং বাতের ব্যথা থেকে দূরে রাখবে। বর্তমানে সময়ে অনেক রুগী অস্টিওপরোসিস (হাড়ের একধরনের রোগ) আক্রান্ত হচ্ছেন। বোরন নামক খনিজ পদার্থের অভাবে এই রোগ হয়। কিশমিশে আছে প্রচুর পরিমাণ বোরন, যা অস্টিওপরোসিস রোগের প্রতিরোধক। সুতরাং পরিবারের সবাইকে কিশমিশ খাওয়ার অভ্যাস করানো উচিত।
৪। কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পলিফেনলস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরী উপাদান। যা কাঁটা-ছেড়া বা ক্ষত হতে ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে দূরে রাখে।
৫। কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হওয়ায় বাধা প্রদান করে। কিসমিসে আরো রয়েছে ক্যাটেচিন, যা পলিফেনলিক অ্যাসিড। এটি ক্যান্সার মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। খাবারে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকলে কোলোরেক্টারাল ক্যান্সার ঝুঁকি কমে যায়। এক টেবিল চামচ কিশমিশ ১ গ্রাম পরিমাণ আঁশ থাকে। সুতরাং কিসমিসের আঁশ ক্যান্সারের ঝুঁকি একেবারে কমিয়ে দেয়।
৬। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা আমাদের পরিপাকক্রিয়া দ্রুত হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
৭। রক্তশূন্যতার কারণে অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা, বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এমনকি, বিষণ্ণতাও দেখা দিতে পারে। কিশমিশে আছে, প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান, যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
৮। কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ব্যাকটেরিয়ারোধী, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফলে এটা ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জ্বর নিরাময় করতে সাহায্য কারে।
৯। রক্তে ভিটামিন এ, এ-বিটা ক্যারোটিন এবং এ-ক্যারোটিনয়েড থাকে। কিসমিস এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। যা চোখের ফ্রি-রেডিকল দূর করতে সক্ষম। কিসমিস খেলে সহজে শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে না। দৃষ্টি শক্তি হ্রাস ও চোখে ছানি পড়ে না। পাশাপাশি পেশী শক্তি হ্রাস পায় না। কিসমিস চোখের জন্য খুব উপকারি।
১০। কিশমিশ শুধুমাত্র রক্তের মধ্যে থাকা বিষো উপাদান কমায় তাই না, বরং রক্তচাপও কমায়। কিশমিশের প্রধান উপাদান, পটাশিয়াম, রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে থাকা উচ্চমাত্রার সোডিয়াম, রক্তচাপ বাড়ার প্রধান কারণ। কিশমিশ শরীরের সোডিয়াম মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
১১। অনেকের ঠিকমত ঘুম আসে না। তাদের জন্য কিসমিস অনেক উপকারি। কারন কিশমিসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা মানুষের অনিদ্রার চিকিৎসায় বিশেষভাবে উপকারী। তাই আজ থেকে কিসমিস খাওয়া শুরু করুন, দেখবেন অনেক উপকার পাবেন।
১২। রক্তে অধিক মাত্রায় এসিডিটি (অম্লতা) বা টক্সিসিটি (বিষ উপাদান) থাকলে, তাকে বলা হয়, এসিডোসিস। এসিডোসিসের (রক্তে অম্লাধিক্য) কারণে বাত, চর্মরোগ, হৃদরোগ ও ক্যান্সার হতে পারে। কিশমিশ রক্তের এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।
বিডি প্রতিদিন/১ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল
