আমেরিকার লেখক মার্ক টোয়েন একবার বলেছিলেন, ধূমপান ছাড়া খুব সহজ, কারণ তিনি শ'খানেকবার ছেড়েছেন। তিনি মারা গিয়েছিলেন ফুসফুসের ক্যান্সারে।
নিকোটিন, মদ বা অন্যান্য মাদকে নেশা বা আসক্তি কি, এবং এতে কতটা ক্ষতি হয় - তা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের ভালোভাবেই জানা আছে। কিন্তু এ ধরনের নেশার সাথে যৌন-আসক্তিকে কি এক কাতারে ফেলা যায়?
অত্যধিক দৈহিক মিলনে আসক্তি কি আসলেই বাস্তবে আছে - নাকি এটা একটা কাল্পনিক ব্যাপার?
মানসিক অসুস্থতার একটি ডায়াগনস্টিক এবং স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়ালে ২০১৩ সালে যৌন আসক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা উঠেছিল - কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় তা বাতিল করা হয়।
কিন্তু এখন 'কমপালসিভ' বা অপ্রতিরোধ্য যৌন আচরণকে এখন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিকভাবে শ্রেণিভুক্ত রোগের যে তালিকা আছে - তাতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
এর আগে ২০১৩ সালে জুয়া খেলার আসক্তি এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া-কে নেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ওই তালিকায় যুক্ত করা হয়।
এখন ডাক্তাররা বলছেন, অতিমাত্রায় যৌন-আসক্তিকেও এই কাতারে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
২০১৪ সালের একটি জরিপে বলা হয়, যৌন আসক্তরা যখন পর্নোগ্রাফি দেখেন তখন মস্তিষ্কের যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয় তা একজন মাদকাসক্তকে যখন তাদের প্রিয় মাদকদ্রব্য দেখানো হয় তার সাথে অনেক মিল আছে।
তবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যালিরি ভুন বলেন, যৌন আসক্তিকে নেশা বলার মত আমরা এখনো যথেষ্ট জানি না।
এমন অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন যারা যৌন আসক্তিকে 'মাদকের নেশার সাথে তুলনীয়' বলে মনে করেন না।
মিথ অব সেক্স এ্যাডিকশন নামে একটি বইয়ের লেখক ডেভিড লি বলছেন, দৈহিক মিলন বা স্বমেহনকে এ্যালকোহল বা অন্য মাদকের সাথে তুলনা করাটা হাস্যকর। মাদকাসক্ত লোক মাদক ছেড়ে দেবার পরের শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় মারাও যেতে পারে।
তার কথা - আসলে যৌন আসক্তি জিনিসটা নেশা কিনা - তার বিচার করা হয় লোকে স্বাভাবিক যৌনজীবন বলতে নৈতিকভাবে কি বোঝে তা দিয়ে।
'যে ডাক্তার আপনাকে দেখছেন - আপনি যদি তার চেয়ে বেশি বা ভিন্ন ধরনের দৈহিক মিলন করেন - তাহলেই আপনাকে বলা হবে সেক্স এ্যাডিক্ট - বলেন তিনি।
যৌন আসক্তি এখনও ঠিক চিকিৎসার বিষয় নয়, এ সংক্রান্ত কোন তথ্যও নেই যে এতে 'আক্রান্ত' হয়ে ঠিক কত লোক ডাক্তারের সাহায্য নিয়েছেন।
ব্রিটেনে কেউ যদি মনে করেন যে তিনি অস্বাভাবিক যৌন বা পর্নোগ্রাফি দেখার আসক্তিতে আক্রান্ত - তাহলে তিনি ওয়েবসাইটে গিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন। এই ওয়েবসাইটি যুক্তরাজ্যের ২১ হাজার লোকের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছিল।
তাতে দেখা যায় ৯১ শতাংশই পুরুষ এবং তাদের মাত্র ১০ শতাংশ ডাক্তারের সাহায্য নিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/০৬ এপ্রিল ২০১৮/আরাফাত