সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

গুণীজন সম্মাননা ২০২০-২১

গুণীজন সম্মাননা ২০২০-২১

তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, অবদান রেখেছেন অসামান্য। কেউ কবিতায়, কেউ কথাসাহিত্যে, কেউ চিকিৎসায়, কেউ চলচ্চিত্রে, কেউ সংগীতে, কেউ অর্থনীতিতে, কেউ মুক্তিযুদ্ধে, কেউ ক্রীড়াক্ষেত্র কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে। দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের একযুগে পদার্পণ উপলক্ষে এই বরণীয় ব্যক্তিত্বদের গুণীজন সম্মাননা ২০২০-২১ জানাচ্ছে  বাংলাদেশ  প্রতিদিন।

 

মনিরুল ইসলাম

চিত্রশিল্প

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। তাঁর জন্ম জামালপুরের ইসলামপুরে, ১৭ আগস্ট ১৯৪৩ সালে। বিশেষ খ্যাতিমান ছাপচিত্রের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এচিংয়ে তিনি এমন একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছেন, যা স্পেনে ‘স্কুল অব মনিরো’ বলে পরিচিত। তিনি ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে চারুকলার পাঠ শেষে এখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৬৬ সালে। পরবর্তীতে স্পেন সরকারের বৃত্তি নিয়ে সে দেশে যান উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য। স্পেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর বহু একক ও যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি স্পেন ও মিসরে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনীতে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৭ সালে তিনি স্পেনের রাষ্ট্রীয় পদক পান। ২০১০ সালে তিনি ভূষিত হন স্পেনের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা দ্য ক্রস অব দি অফিসার অব দি অর্ডার অব কুইন ইসাবেলায়, ২০২০ সালে স্পেনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান রয়েল মেরিট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।  তিনি দেশে ১৯৯৯ সালে একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদকসহ বিভিন্ন পদক ও সম্মাননা লাভ করেন।

 

সেলিনা হোসেন

কথাসাহিত্য

সেলিনা হোসেনের জন্ম ১৪ জুন ১৯৪৭, রাজশাহীতে। বাংলা ভাষার অন্যতম অগ্রণী কথাসাহিত্যিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর। ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম নারী পরিচালক হন। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। তাঁর লেখার জগৎ বাংলাদেশের মানুষ, তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। তাঁর উপন্যাসে প্রতিফলিত হয় সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংকটের সামগ্রিকতা। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রিসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০০৯ সালে একুশে পদক, ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা  পদক লাভ করেন।

 

ইমেরিটাস অধ্যাপক কে আজাদ চৌধুরী

শিক্ষা

ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীর জন্ম ২১ অক্টোবর ১৯৪৬, ফেনীতে। তিনি উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রানউয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান, ডিনসহ প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার ২৯ বছর পর তিনি সমাবর্তন চালু করেন। তিনি ন্যাশনাল হেলথ পলিসির সদস্য, ন্যাশনাল ড্রাগ কাউন্সিল ও ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসির সদস্যসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়) দেশে-বিদেশে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও শিক্ষা  সম্প্রসারণে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে।

 

. আতিউর রহমান

অর্থনীতি

ড. আতিউর রহমান খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ। তিনি ১৯৫১ সালে  জামালপুর জেলার দিঘপাইত গ্রামে  জন্মগ্রহণ করেন। উন্নয়ন অর্থনীতির একজন গবেষক হিসেবে নিজের কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। দুই মেয়াদে পাঁচ বছর গভর্নর হিসেবে দায়িত্বকালে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে আমূল পরিবর্তনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন।  বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক।

 

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

সংগীত

বাংলা ভাষার খ্যাতিমান গীতিকার, সুরকার ও চলচ্চিত্র প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তাঁর জন্ম ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ সালে। স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম নিয়ে অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা তিনি। বিবিসি বাংলা তৈরিকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় তাঁর লেখা গান তিনটি। তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ চলচ্চিত্রের জন্য। চলচ্চিত্রের কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লেখায়ও দক্ষতা দেখান তিনি।  ৪০টির বেশি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তিনি ২০০২ সালে একুশে  পদক লাভ করেন।

 

কর্নেল জাফর ইমাম (অব.) বীরবিক্রম

মুক্তিযুদ্ধ

লে. কর্নেল জাফর ইমাম (অব.), বীরবিক্রম ১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর ফেনী জেলার ফুলগাজী থানাধীন নেয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে পাঞ্জাব থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাসে ৯ এফ.এফ. রেজিমেন্টে এ কমিশন লাভ করেন। একাত্তরের মার্চে তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত ২৪ এফ.এফ. রেজিমেন্ট থেকে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ছিলেন দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা অধিনায়ক ও বিলোনিয়া সাব-কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই বীর মুক্তিযোদ্ধা  বীরবিক্রম  উপাধিতে ভূষিত হন।

 

. বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

অর্থনীতি

ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ। তিনি ২০০৭-০৮ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৪১ সালে পাবনার সুজানগরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করে যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন এবং সেখানকার উইলিয়ামস কলেজ থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতেও স্নাতকোত্তর ও বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান  হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ (অব.) বীরবিক্রম

ফুটবল ক্রীড়াঙ্গন

মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ (অব.) বীরবিক্রমের জন্ম ২৯ অক্টোবর ১৯৪৪ সালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন। তিনি তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে ইরান, তুরস্ক ও বার্মায় ফুটবল খেলেন। ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে  মোহামেডানের পক্ষে খেলে একাধিকবার শিরোপা ও আগাখান গোল্ডকাপ জয় করেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালে মোহামেডান লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। বাফুফে সভাপতিও ছিলেন তিনি। ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮০ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার অর্জন করেন।  বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্র বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করে।

 

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

অর্থনীতি

মরহুম খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ১৯৪১ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। ১৯৬৩ সালে ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন।  ২০১১ সালে বাংলা একাডেমি তাঁকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।  এ বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

 

স্থপতি মুস্তাফা খালীদ পলাশ

স্থাপত্য

বরেণ্য স্থপতি শিল্পী মুস্তাফা খালীদ পলাশ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৮৮ সালে পাস করে সেখানেই স্থাপত্য বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে ‘ভিস্তারা আর্কিটেক্টস’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেই প্রতিষ্ঠান এখন সুপরিচিত। তিনি এই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থপতি। তাঁর নকশায় দেশে গড়ে উঠেছে অনেক বিখ্যাত স্থাপনা। তবে মুস্তাফা খালীদ পলাশ নিজেকে চিত্রশিল্পী হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। স্থপতি হিসেবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো হলো- বসুন্ধরা সিটি, ওয়েস্টিন ঢাকা, গ্রামীণফোন ভবন, বাংলালিংক ভবন, রবি ভবন, ইউনিক ট্রেড সেন্টার, আবদুল মোনেম ডিসট্রিক্ট, সিয়াম টাওয়ার, বসুন্ধরা কনভেনশন সিটি, রেডিসন বে ভিউ হোটেল চট্টগ্রাম, ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল প্রভৃতি।

 

কবি হেলাল হাফিজ

কবিতা

হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতায় যোগদান করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য সম্পাদক। তাঁর কবিতা সংকলন ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর একাধিক সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’। এ কবিতার দুটি পঙ্ক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’।  ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।

 

জুয়েল আইচ

জাদুশিল্প

বিশ্বের খ্যাতনামা জাদুশিল্পীদের সঙ্গে উচ্চারিত হয় জুয়েল আইচের নাম। এ ছাড়া দেশজুড়ে তাঁর খ্যাতি রয়েছে বাঁশিবাদক ও চিত্রশিল্পী হিসেবেও। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি পিরোজপুর জেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়নে। ছোটবেলা বাড়িতে বেদেবহর এসেছিল। তাদের জাদু দেখে ভালো লেগে যায় জুয়েল আইচের। সেই ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হয় বানারীপাড়া সার্কাস দলের এক জাদুকরের গলা কাটার জাদু দেখে। তিনি মঞ্চে প্রথম জাদু প্রদর্শন করেন ১৯৭২ সালে। অর্জন করেছেন একুশে পদক, যুক্তরাষ্ট্রের সেরা জাতীয় পুরস্কার  ‘বেস্ট ম্যাজিশিয়ান অব দ্য ইয়ার’।

 

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

সংগীত

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। বহুমুখী প্রতিভার কারণে তিনি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক সমাদৃত। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্যদের মধ্যে তাঁকেই সবচেয়ে জনপ্রিয় গণ্য করা হয়। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তাঁর সম্মাননার ঝুড়িতে আরও আছে ‘বঙ্গভূষণ’ পদক, ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক’, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রদত্ত ‘সংগীত সম্মান পুরস্কার’। ২০০২ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ নারী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসেবে আনন্দ সংগীত  পুরস্কারে ভূষিত হন।

 

অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন

চিকিৎসা

অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, জার্মানি ও ইংল্যান্ডে সার্জারি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেলে প্রথম বার্ন ইউনিট চালু করেন ১৯৮৬ সালে। ২০০৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্বতন্ত্র বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন। পরে সরকার তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। পরবর্তীতে দেশের একাধিক মেডিকেল কলেজে  বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

 

আনোয়ারা বেগম

অভিনয়

অভিনয় শিল্পী আনোয়ারা বেগম ১৯৪৮ সালের ১ জুন কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে ১৩ বছর বয়সে অভিনেতা আজিমের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। তাঁর অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র আবদুল জব্বার খান পরিচালিত ‘নাচঘর’ (১৯৬৩)। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ (১৯৬৭) চলচ্চিত্রটি ছিল আনোয়ারার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। অভিনয়শিল্পী হিসেবে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮),  ‘দেবদাস’ (১৯৮২) ও  ‘শুভদা’ (১৯৮৭) তাঁকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যায়।

 

কাঙ্গালিনী সুফিয়া

সংগীত

বাউল সম্রাজ্ঞী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। প্রকৃত নাম টুনি হালদার। ১৯৬১ সালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গ্রাম্য একটি গানের অনুষ্ঠানে ১৪ বছর বয়সে তিনি তাঁর সংগীত জীবন শুরু করেন। তাঁর পরিবেশিত গানের সংখ্যা প্রায় ৫০০। ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’, ‘পরাণের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না, আমার ভাঁটি গাঙের নাইয়া’  প্রভৃতি গানের জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিত।

 

 সৈয়দ আবদুল হাদী

সংগীত

দেশের সংগীতাঙ্গনের অন্যতম কণ্ঠতারকা  সৈয়দ আবদুল হাদী। তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৪০ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন ইপিসিএস (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস) অফিসার।  সৈয়দ আবদুল হাদী দেশাত্মবোধক গানের জন্য জনপ্রিয়। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সংগীত জগতে বিচরণ করছেন। ১৯৬০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রে গান গাওয়া  শুরু করেন তিনি।

 

শেখ মো. আসলাম

ফুটবল

১৯৫৮ সালের ১ মার্চ খুলনা শহরে জন্ম শেখ মো. আসলামের। ১৯৭৪ সালে খুলনার জনপ্রিয় ক্লাব মুসলিম স্পোর্টিংয়ে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু। ১৯৮৩ সালে আসলাম নাম লেখান ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানে। এরপর খেলেন ঢাকা আবাহনীতে। এখানেই তারকা খ্যাতি পেয়ে যান তিনি। ১৯৮৭ সালে আবাহনীর অধিনায়ক হন আসলাম। ১৯৮৪, ১৯৮৫, ১৯৮৬ ও ১৯৮৭ সালে টানা চারবার সর্বোচ্চ গোলদাতা হন শেখ মো. আসলাম। বাংলাদেশের একমাত্র  ফুটবলার হিসেবে চারটি এশিয়ান গেমসে খেলার রেকর্ড আছে শেখ আসলামের।

 

মৌসুমী

অভিনয়

আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী। জন্ম ৩ নভেম্বর, ১৯৭৩ সালে খুলনায়। তিনি ১০ বছরে রেকর্ড সংখ্যক ১০০ ছবিতে অভিনয় করেন। মৌসুমী অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩)। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ছোট পর্দার বেশ কিছু নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৩ সালে ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে চিত্রপরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।  তিনি একাধিকবার সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার  লাভ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর