ইঁদুর মারতে বিষ ব্যবহার করা হয় এটা সকলেরই জানা। আর নির্দিষ্ট মাত্রার বিষ হজম করার ক্ষমতা প্রতিটি প্রাণীরই থাকে। ঠিক তেমন ইঁদুরও তাদের মাত্রা অনুযায়ী আবর্জনা খেয়ে থাকে। কিন্তু যদি এমন হয় যে ইঁদুর বিষ খেয়ে বেঁচে থাকে তাহলে বিস্মিত হতেই হবে। শুনতে অবাক লাগলেও যুক্তরাষ্ট্রের মোহাভি মরুভূমির কাঠ ইঁদুর প্রতিদিনই মারাত্মক বিষাক্ত খাবার খেয়ে পেট ভরায়। মরুভূমির ঝোঁপ-ঝাড়, নিম্নভূমিতে জন্মানো গুল্ম, যেগুলোর পাতায় বিষ রয়েছে এমন খাবারই থাকে এদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়।
রসায়ন তত্ত্বে দেখা গেছে, উদ্ভিদের এই বিষগুলো শতাধিক কেমিকেলের সংমিশ্রণ। এর মধ্যে প্রধান হলো নরডিহাইড্রোগুয়ারেটিক এসিড (এনডিজিএ)। এটি এমন একটি কেমিকেল যা একটি সাধারণ ইঁদুরের লিভার ও কিডনি ধ্বংস করে দিতে পারে। কিন্তু কাঠ ইঁদুরের কাছে এটা যেন কোনো বিষয়ই না। প্রতিদিন এরা যে পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহণ করে তা যেকোনো সাধারণ ইঁদুরের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক কেভিন কোল যখন কাঠ ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করছিলেন তখন অবাক হন। তার মনে হয় ইঁদুরের পাকস্থলীতে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিষাক্ত খাবার হজমে অসুবিধা হয় না। ব্যাকটেরিয়া এমন এক ধরনের অণুজীব যা অপরিশোধিত তেল থেকে শুরু করে ইউরেনিয়াম পর্যন্ত সবই হজম করতে পারে এবং প্রতিটি স্তন্যপায়ী জীবের পাকস্থলীতেই এক ট্রিলিয়নের বেশি অণুজীব থাকে। এটা প্রমাণিত এদের মধ্যে কিছু অণুজীব রয়েছে যারা তৃণভোজী প্রাণীর খাবার গ্রহণের পর পুষ্টি ও বিষ আলাদা করে ফেলে। কোল এটি পরীক্ষা করেন।
প্রায় ১৭ হাজার বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষাক্ত গুল্ম মেক্সিকো থেকে দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। আরো বিস্তার লাভ করে যখন এটি মোহাভি মরুভূমিতে আসে, তখন কাঠইঁদুর এগুলো খেতে শুরু করে। কিন্তু উত্তরের মরুভূমিতে এই বিষাক্ত গুল্ম জন্মায় না বলে সেখানে থাকা কাঠ ইঁদুর এর সঙ্গে অভ্যস্ত নয়।