কুয়াশাচ্ছন্ন এক শীতের সকাল। একটি ছোট সাদা গাড়ি বেরিয়ে আসছে গুরগাঁও-এর একটি কারখানার দরজা দিয়ে। দিনটা ১৯৮৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর। দিনের আলোয় যে গাড়িটি সেদিন বেরিয়ে এসেছিল, সেটি পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে তামাম দেশের প্রিয় গাড়ির আসনটি দখল করবে তা কে-ই বা জানতো। দেশের প্রথম মারুতি ৮০০ গাড়ির চালকের আসনে বসেছিলেন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের এক কর্মী হরপাল সিং। সেদিন কারখানা থেকে সাধের গাড়ি চালিয়ে সোজা ফিরে এসেছিলেন গ্রিন পার্কে নিজের পরিবারের কাছে।
মারুতি ৮০০ নামের মধ্যবিত্তদের জন্যে একটি গাড়ি বাজারে আসার খবরে অনেকেই উত্সাহিত হয়ে এই গাড়ির জন্যে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু গুটি কয়েকের হাতে লটারির মাধ্যেমে উঠে এসেছিল এই গাড়ির চাবি। সেই সময়ে গাড়ির দাম পড়েছিল ৪৭ হাজার ৫০০ রুপি। হরপাল সিং-এর জামাই জানিয়েছেন, সেই সময়ে তার শ্বশুরের থেকে ওই গাড়ি এক লাখ টাকার বিনিময়েও কিনে নিতে চেয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু হরপাল সিংকে রাজি করানো যায়নি।
হরপাল সিংয়ের হাতে প্রথম মারুতি ৮০০ গাড়ির চাবি তুলে দিয়েছিলেন স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধী। এর জন্যে গুরগাঁও-তে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে হরপাল সিং-এর পরিবারের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন তার প্রিয় সহকর্মী ইন্দিরা-পুত্র রাজীব গান্ধীও। যেই মুহূর্তে তার নাম ঘোষিত হয়েছিল, প্রিয় সহকর্মীকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিলেন রাজীব গান্ধী।
মারুতির আগে একটি ফিয়াট চালাতেন হরপাল সিং। তবে যেদিন হাতে মারুতির স্টিয়ারিং এল, সেদিন থেকে অন্য কোনও গাড়ি ছুঁয়েও দেখেননি তিনি। এতটাই ভালোবাসায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন সেই চার চাকাটির সঙ্গে। যখন মারুতি জেন গাড়িটি বাজারে আসে তখন পরিবারের সকলেই অনুরোধ করেছিলেন, যাতে পুরনো গাড়িটির পরিবর্তে তিনি নিয়ে আসেন নতুন জেন গাড়ি। কিন্তু কিছুতেই টলানো যায়নি হরপাল সিংকে। স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন, যতদিন বেঁচে থাকবেন এই গাড়িটিই চালাবেন। শেষদিন পর্যন্ত কথার নড়চড় হয়নি। স্মৃতিচারণ করতে করতে তার বড় মেয়ে গোবিন্দর পাল কৌর (৫৮) জানিয়েছেন, 'এমন অনেক সময়েই হয়েছে যখন আমরা আট জনও এঁটে যেতাম গাড়ির ভিতর! আর ভাবতাম এত ছোট গাড়িতে এটা কী করে সম্ভব! একবারও এমন হয়নি যে রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়েছে।'
বিডি-প্রতিদিন/১৮ এপ্রিল ২০১৫/ এস আহমেদ