ছোটোবেলায় কাব্য শুনেছিল 'বিছানার নিচে তাকিও না, ওখানে দৈত্য আছে।' এরপর থেকে বিছানায় শুয়েই নিজের পুরো শরীর কম্বলে মুড়ে ফেলত সে। বড় হয়ে ওই শিশুসুলভ ধারণা ধেকে মুক্তি পায় কাব্য।
এখন কাব্যের বয়স ২৩ বছর। তবে দৈত্যের ধারণা তার মধ্যে বাসা বেঁধেছে নতুন করে। এখন কাব্য জানে শুধু বিছানার নিচে হয়, তার চারপাশে ভয়াল দাঁত বের করে ওঁত পেতে থাকে দৈত্যরা। বিভিন্ন রূপে তারা হামলে পড়ে মেয়েদের ওপর। কখনো বিমানের যাত্রী হয়ে; কখনো বা শিক্ষকের চেহারায়। এমনই এক দৈত্যের ভয়াল থাবা আঘাত হানে কাব্যর জীবনে। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া সেই পীড়াদায়ক ঘটনা 'ইয়ুথ কি আওয়াজ'-এ তুলে ধরেছেন ভারতীয় তরুণী কাব্য রামান।
সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে স্কুবা ডাইভিং সংস্থা 'ড্রিমস ডাইভিং' আয়োজিত প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন কাব্য। আরব সাগরের গভীরে পৌঁছে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে নৌকা থেকে একে একে রওনা হন প্রশিক্ষকরা। কাব্যকে তালিম দেওয়ার জন্য আর সবার থেকে দূরে নিয়ে যান স্কুবা ডাইভিং প্রশিক্ষক ধীরাজ সিং (ছদ্মনাম)। সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১২ মিটার নিচে ছাত্রীকে নিয়ে ডুব দেন তিনি। প্রশিক্ষকের হাতে ছিল শ্বাস নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ট্যাঙ্কসহ যন্ত্রপাতি। আচমকা নিস্তরঙ্গ সাগরতলে ধীরাজের হাত কাব্যর শরীর স্পর্শ করে। তালিম দেওয়ার জন্য নয়, তরুণী বুঝতে পারেন নিছক যৌন লালসা মেটাতেই তাকে ছোঁয়া হচ্ছে।
কাব্য লিখেন, 'আমার চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। তার থাবা থেকে মুক্ত হতে ইচ্ছে করছিল। বন্ধুদের কাছে ফিরতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু কিছু করার ছিল না। পরের ৪০ মিনিট আমার অসহায়ত্বের পূর্ণ সুযোগ নেয় সে।' কাব্যের ভাষায়, 'এই দুঃস্বপ্নের মুহূর্ত কাটিয়ে আমরা একটা সময় তীরে ফিরে আসি। অন্যান্য ডাইভিং প্রশিক্ষক তখন জানতে চান- আমি এতক্ষণ কোথায় ছিলাম? এরপর আমি অন্যদের কাছে শুনলাম তারা কীভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।'
অন্য প্রশিক্ষকদের থেকে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে সবার সামনে ধীরাজকে সরাসরি পানির নিচের আচরণ সম্পর্কে জানতে চান কাব্য। এমন প্রশ্নের মুখে থতমত খেয়ে যান তিনি। নিজের অপরাধ স্বীকার করে সে। এরপর আদালতে তার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন কাব্য।
১৬ এপ্রিল ওই মামলার শুনানি হয়েছে। চূড়ান্ত শুনানির তারিখও ধার্য্য হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৩ বছরের সাজা হতে পারে ধীরাজের। কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন থাকতে পারে মেয়েদের জীবন যারা ক্ষত-বিক্ষত করে দেন, তাদের জন্য এই শাস্তিটুকুই কি যথেষ্ট?
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ এপ্রিল ২০১৫/শরীফ