পাশ্চাত্যে হরহামেশা নগ্ন বাইক রেসে অংশ নিচ্ছেন নারীরা। বিভিন্ন স্লোগান সামনে রেখে গায়ের সুতোটিও খুলে রেখে প্রতিযোগিতায় নামছেন। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের কোন নারী এমন নগ্ন হয়ে সাইকেল প্রতিযোগিতায় নামবেন সেটা কল্পনারও অতীত। এমনকি এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেলেও আয়োজকদের কপালে দুর্ভোগ আছে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এবার লণ্ডনে নগ্ন বাইক সফরে অংশ নিয়ে বিরল সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন ভারতীয় কন্যা মীনাল জৈন। সভ্যতার বিষ ঝেড়ে ফেলে স্বচ্ছ, দূষণহীন পৃথিবী গড়ার শপথে হয় ওই বাইক সফর।
চলতি বছরে আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড নেকেড বাইক রাইডের (ডব্লিউএনবিআর) আসর বসেছিল লন্ডনে। বিশ্ব বিখ্যাত এই প্রচার অভিযানে সামিল হয়ে অসামান্য সাহসিকতার নমুনা পেশ করলেন মীনাল। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি এই রাইডে অংশগ্রহণ করলেন। সর্বসমক্ষে নগ্ন হওয়ার সাহসই শুধু নয়, তাঁর আচরণে কোনও রকম দ্বিধা বা আড়ষ্টতা লক্ষ্য করা যায়নি। ব্রিটেনের রাজধানীর পথে বিভিন্ন বয়সী ও দেশীয় নারী-পুরুষের সঙ্গে গোটা রাইড হাসিমুখে সাইকেল চালিয়ে গিয়েছেন সুন্দরী মীনাল।
সভ্যতার অন্যতম অবদান দূষণ জর্জরিত পৃথিবী। পেট্রোল-ডিজেলের ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ছে নীল গ্রহের আকাশ। বিলাসিতার খেসারত দিচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড আচ্ছাদিত ফুসফুস। শরীরে বাসা বাঁধছে মারণরোগের জীবাণু। দূষণের আগ্রাসন ঠেকাতে অভিনব প্রতিবাদে সোচ্চার হন একঝাঁক দুঃসাহসী পরিবেশপ্রেমী।
২০০৪ সালের১৯ জুন তাঁদের উদ্যোগে স্পেনের রাস্তায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ডব্লিউএনবিআর। সম্পূর্ণ নিরাভরণ নারী-পুরুষ সাইকেল-স্কেট বোর্ড-রোলার স্কেটস নিয়ে সামিল হন সভ্যতার অভিশাপের বিরুদ্ধে এক অভিনব প্রতিবাদ মিছিলে। ক্রমে আন্দোলনের বীজমন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছেন বিশ্বের বহু দেশের মানুষ। প্রতি বছর পৃথিবীর নানান শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে ডব্লিউএনবিআর।
এ বছর লন্ডনে ডব্লিউএনবিআর-এর মঞ্চে প্রথম ভারতীয় হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন মীনাল জৈন। তাঁর সাহসী পদক্ষেপে মুগ্ধ দেশ-বিদেশের অগণিত প্রতিবাদী মানুষ।
বর্ষীয়ান বাইকার অ্যান্ডি কার সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন, 'আমি মনে করি, আমার চেয়ে ও অনেক বেশি সাহসী। নিজের শরীর নিয়ে ওর কোনও ছুঁতমার্গ নেই। বিশ্বাস করি, আমার তুলনায় ঢের বেশি স্পষ্টবক্তা মীনাল। সুন্দর শরীর ও ভুবনমোহিনী হাসি ওর সম্পদ। ওর মঙ্গল কামনা করি।'
তবে বিষয়টি ভারতীয় জনগণ কীভাবে দেখছে তা অবশ্য কোন প্রতিবেদনে উঠে আসেনি।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ