তিনবার তাজমহল‚ দুবার করে লাল কেল্লা‚ সংসদ ভবন এবং রাষ্ট্রপতি ভবন বিক্রির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ঠকিয়েছেন অগণিত বিদেশি পর্যটককে। ‘বিক্রি' করেছেন দেশের স্মৃতিসৌধও। আর এসব করেছেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ যাদবের স্বাক্ষর নকল করে।
তিনি বাস্তবের নটবরলাল। তার আসল নাম মিথিলেশ কুমার শ্রীবাস্তব।
১৯১২ সালে তার জন্ম বিহারের সিওয়ান জেলার বাংরা গ্রামে। প্রথম জীবনে ছিলেন আইনজীবী। পরে হয়ে যান প্রতারক। সারা জীবনে ব্যবহার করেছেন অন্তত ৫০টি ছ্দ্মনাম। পাশাপাশি‚ ছদ্মবেশ ধরতেও ছিলেন অত্যন্ত পটু। তবে ‘নটবরলাল'- ছদ্মনামেই বেশি পরিচিত হন মিথিলেশ কুমার।
বোকা বানিয়ে ঐতিহাসিক সৌধ বিক্রির সঙ্গে নটবরলাল দেদার ঠকিয়েছেন টাটা-বিড়লা-অম্বানির মতো শিল্পপতিকেও। কখনও সমাজসেবার নামে টাকা চেয়ে। কখনও গরীব মানুষ সেজে।
শেষে‚ ভারতের ৮টি রাজ্যে তার নামে ঝুলতে থাকে ১১৩টি মামলা। ‘কেরিয়ার'-এ মোট ৯ বার ধরা পড়েন তিনি। প্রতি বারই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যান। তাকে শেষবার দেখা যায় ১৯৯৬ সালে। কানপুর থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন পুলিশি প্রহরায়। অসুস্থ সেজে হুইল চেয়ারে বসেছিলেন ৮৪ বছর বয়সী মিথিলেশ ওরফে নটবরলাল। সে বারও দিল্লির রেলস্টেশনে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তাদের নাকের ডগা দিয়ে পালান তিনি।
এরপর আর দেখা যায়নি তাকে। তার আইনজীবী দাবি করেন‚ তিনি ২০০৯ সালে ৯৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। যদিও এই প্রতারকের ভাইয়ের দাবি‚ অনেক আগে ১৯৯৬ সালেই তার মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ একাধিকবার তাজমহল বিক্রি করা নটবরলাল নিজেই ‘মারা গিয়েছেন' দুবার।
সারা ভারতের চোখে খলনায়ক মিথিলেশ অবশ্য নিজের গ্রামে নায়ক। সেখানে তার মূর্তিও আছে। তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয় এক ভারতীয় সেনার সঙ্গে।
দেশবাসীর স্মৃতির পাশাপাশি নটবরলাল বেঁচে আছেন হিন্দি সিনেমার চিত্রনাট্যে। দশকের পর দশক জুড়ে অসংখ্য বলিউডি সিনেমা তৈরি হয়েছে এই কীর্তিমানের উপর।
বিডি প্রতিদিন/০৭ মে ২০১৭/এনায়েত করিম