ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় ঘটে গেল হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। মাত্র এক প্যাকেট চিপসের জন্য প্রকাশ্যে অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করলো ১২ বছরের এক শিশু।
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যায়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার গোসাইবাজার এলাকায়। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কৃষ্ণেন্দু দাস দোকান থেকে একটি চিপসের প্যাকেট হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসার পর পরই শুরু হয় তার জীবনের সবচেয়ে বড় অপমান।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণেন্দু দোকানে ঢুকে দোকানির জন্য অপেক্ষা করছিল এবং বারবার ডেকে বলছিল, ‘আঙ্কেল, আমি চিপস কিনবো।’ কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে সে দোকানের সামনের স্তূপ থেকে একটি চিপসের প্যাকেট তুলে নেয়।
কিছুক্ষণ পর দোকানি শুভঙ্কর দীক্ষিত এসে কৃষ্ণেন্দুকে ধরে ফেলে। অভিযোগ, তিনি তাকে প্রকাশ্যে চড় মারেন এবং সবার সামনে কান ধরে উঠ-বস করান। পরে কৃষ্ণেন্দুর মা ঘটনাস্থলে এলে তিনিও ছেলেকে বকুনি দেন ও চড় মারেন।
কৃষ্ণেন্দু বারবার বলছিল, সে চিপস চুরি করেনি, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা প্যাকেটটি কুড়িয়ে নিয়েছে এবং পরবর্তীতে দাম দেওয়ার কথাও জানিয়েছিল। কিন্তু দোকানি তার কথা বিশ্বাস করেননি।
অপমানে ভেঙে পড়া কৃষ্ণেন্দু মা’র সঙ্গে বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর তার মা ও প্রতিবেশীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখে, কৃষ্ণেন্দু অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে এবং পাশে আধা খালি কীটনাশকের বোতল। তাকে দ্রুত তমলুক হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি।
ঘটনাস্থলে একটি হাতে লেখা চিরকুট পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল-‘মা, আমি চোর নই। আমি চুরি করিনি। আঙ্কেল দোকানে ছিলেন না, আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম। ফেরার পথে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা কুরকুরের প্যাকেটটা তুলে নিয়েছিলাম। আমি কুরকুরে ভালোবাসি। এই আমার শেষ কথা, আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত দোকানি স্থানীয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সহকারী হিসেবে পুলিশের সঙ্গে কাজ করেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তকে খুঁজে পেতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল