যুক্তরাজ্যে ডিসপোজেবল (একবার ব্যবহারযোগ্য) ই-সিগারেট বা ভ্যাপ বিক্রি ও সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আগামীকাল রবিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ‘একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার প্রবণতা’ বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
শুক্রবার (৩০ মে) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
পরিবেশবিষয়ক জুনিয়র মন্ত্রী মেরি ক্রে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে একবার ব্যবহারযোগ্য ভ্যাপ আমাদের রাস্তাকে আবর্জনায় পরিণত করেছে এবং এখানকার শিশুদের নিকোটিনে আসক্ত করে তুলছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন সময় হয়েছে এই ভয়ংকর যন্ত্রগুলোকে বিদায় জানানোর।’
নতুন এই আইন অনুযায়ী, একবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ২০০ পাউন্ড (প্রায় ২৬৯ ডলার) জরিমানা গুনতে হবে। আর বারবার আইন লঙ্ঘন করলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
২০২১ সালে দেশটিতে ডিসপোজেবল ভ্যাপের ব্যবহার শুরু হয়। এরপর থেকে বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে এগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। মিন্ট, চকলেট, ম্যাঙ্গো ও তরমুজের রঙিন ও মজাদার ফ্লেভার ছিল আকর্ষণের মূল কারণ।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ লাখ ডিসপোজেবল ভ্যাপ ফেলে দেওয়া হয়েছে, যা পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
ম্যাটেরিয়াল ফোকাস নামক স্বাধীন একটি সংস্থা জানিয়েছে, এসব ভ্যাপের সঙ্গে প্রতিবছর প্রায় ৪০ টন লিথিয়াম ধাতু নষ্ট হচ্ছে, যা দিয়ে ৫ হাজার বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানো যেতো।
ই-ওয়েস্ট (ইলেকট্রনিক বর্জ্য) বিষয়ক কোম্পানি সুইপ কুসাকোসকির বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক জাস্টিন গ্রিনাওয়ে বলেন, ‘সঠিকভাবে ফেলা না হলে প্রতিটি ভ্যাপ থেকেই আগুন লাগার শঙ্কা থাকে।’
স্বাস্থ্য সেবামূলক দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথ (এএসএইচ) এর তথ্যমতে, সরকারি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর থেকেই ভ্যাপের ব্যবহার কমতে শুরু করেছে।
এএসএইচ এর সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, ২০২৪ সালে ১৮-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৫২ শতাংশ ডিসপোজেবল ভ্যাপ ব্যবহার করতেন, ২০২৫ সালে তা কমে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে।
সংস্থার উপ-প্রধান নির্বাহী ক্যারোলিন সের্নি বলেন, ‘এই নতুন আইন শিশুদের মধ্যে ভ্যাপের ব্যবহার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। একইসঙ্গে ধূমপান ছাড়তে সহায়ক পণ্য পাওয়ার সুযোগও রাখা হবে।’
অ্যাকশন অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথ এর জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের ১১ শতাংশ (প্রায় ৫৬ লাখ) নিয়মিত ভ্যাপ ব্যবহার করেন। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে এই হার ১৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৯ লাখ ৮০ হাজার নাবালক ভ্যাপ ব্যবহার করছে।
আর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের ৫২ শতাংশই একবার ব্যবহারযোগ্য (ডিসপোজেবল) ভ্যাপ বেশি পছন্দ করেন।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য বা রিফিলযোগ্য ভ্যাপ ডিভাইসে অনেক ব্যবহারকারী চলে যেতে পারে বলেও মনে করছেন সমালোচকরা।
অন্যদিকে, এ নিষেধাজ্ঞায় নিকোটিন গ্রহণ কমবে না, বরং অবৈধ পণ্যের প্রবাহ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় অনলাইন ভ্যাপ রিটেইলার ‘ভ্যাপ ক্লাব’ এর পরিচালক ড্যান মারচেন্ট সতর্ক করে বলেন, ‘এই আইন কার্যকরের মাধ্যমে শুধু বিক্রয় নিষিদ্ধ হবে, ব্যবহার নয়। এতে অবৈধ এবং বিপজ্জনক পণ্যের বাজারে ঢুকে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের এই নিষেধাজ্ঞা বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের মতো ইউরোপীয় দেশের পথ অনুসরণ করে কার্যকর করা হচ্ছে। নতুন বিধিনিষেধ প্রণয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে আয়ারল্যান্ডও।
সূত্র : বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত