বাংলাদেশের চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।
৪০টি জেলার ৯৭টি উপজেলায় ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। সতর্কাবস্থায় রয়েছে র্যাব-পুলিশ ও বিজিবি।
এবারের উপজেলা নির্বাচন এমন এক সময় হচ্ছে, যার কিছুদিন আগে ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়নি এবং ভোটার উপস্থিতিও ছিল কম । কিন্তু নির্দলীয় এই নির্বাচনটিতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই তাদের প্রার্থী রেখেছে ও সমর্থন দিয়েছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স বা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেছেন, এবারে এই স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ থাকায় সর্বাধিক ভোটার উপস্থিতি হবেন বলে তারা ধারণা করছেন ।
এবার উপজেলা নির্বাচনে পুরনো ভোটারদের চেয়ে নতুন ভোটারদের উপস্থিতি বেশি হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। উত্তরের জেলা বগুড়ায় এবারে ৬টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা লাইট হাউজের পর্যবেক্ষক রকিবুল ইসলাম খান বলেন, সংসদ সদস্যদের ক্ষমতার কারণে অনেক সময়ই উপজেলা চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিতে পারেন না। সে কারণে পুরনো ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ তুলনামূলক কম দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, নতুন অনেক ভোটার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। তাই তাদের উৎসাহ বেশি। তবে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতার কারণে স্থানীয় উন্নয়নে চেয়ারম্যানরা অবদান রাখতে পারেন না। তাই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে পুরনো ভোটারদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।
এদিকে উৎসবমুখরভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের আইন লঙ্ঘন বরদাশত করা হবে না।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, যেসব গোয়েন্দা সংস্থা উপজেলা নির্বাচনের নিরাপত্তার কাজ করছে তাদের কাছে সহিংসতার কোনো খবর নেই। তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
নির্বাচন হচ্ছে যে ৯৭টি উপজেলায়
ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা, খাগড়াছড়ির রামগড়, সদর, মাটিরাংগা, মহালছড়ি, মানিকছড়ি ও পানছড়ি উপজেলা, ঝিনাইদহ সদর, কালিগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও শৈলকুপা উপজেলা, মাগুড়ার সদর ও শ্রীপুর উপজেলা, ভোলার লালমোহন উপজেলা, মানিকগঞ্জের শিবালয়, দৌলতপুর, সিংগাইর ও সাটুরিয়া, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা, রাজবাড়ী সদর, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা, পঞ্চগড়ের সদর, বোদা, আটোয়ারী ও দেবীগঞ্জ উপজেলা, রংপুরের তারাগঞ্জ, ও মিঠাপুকুর, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, ভুরুংগমারী ও উলিপুর উপজেলা, গাইবন্ধার সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া, ধুনট, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও সোনাতলা উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নাটোরের সিংড়া, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলা, মেহেরপুরের সদর উপজেলা, কুষ্টিয়া সদর ও ভেড়ামারা উপজেলা, নড়াইলের কালিয়া, জামালপুরের সদর ও সরিষাবাড়ী উপজেলা, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও মকসুদপুর উপজেলা, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, জজিরা, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলা, নরসিংদীর পলাশ ও বেলাবো উপজেলা, সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলা, সিলেটের বিশ্বনাথ, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, গোয়াইনহাট ও জৈয়ন্তাপুর উপজেলা, হবিগঞ্জের বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও মিরশরাই উপজেলা, নওগাঁর রানীনগর ও মহাদেবপুর উপজেলা, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, বজিতপুর ও নিকলী উপজেলা, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা, পাবনার সুজানগর, সাথিয়া ও আটঘরিয়া উপজেলা, খুলনার দিঘলিয়া ও কয়রা উপজেলা, বরিশালের গৌরনদী ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা, দিনাজপুরের কাহারোল ও খানসামা উপজেলা, নিলফামারীর ডিমলা, সৈয়দপুর ও জলঢাকা উপজেলা, যশোরের অভয়নগর উপজেলা, নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কেন্দুয়া উপজেলা।
প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে চার দফায় ৩৯৪টি উপজেলায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এগুলোর মধ্যে প্রথম দফায় ৯৭টি উজেলায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় দফার ১১৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় দফায় ৮৩টি উপজেলার ভোটগ্রহণ হবে ১৫ মার্চ এবং চতুর্থ দফায় ৯২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৪ মার্চ।