সিরিয়াল লেডি কিলার, নারী ব্যবসায়ী, মাদক ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিচ্চি বাবুকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকার উত্তরখান এলাকার একটি বাসা থেকে দুর্ধর্ষ এই খুনিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর গতকাল বুধবার বগুড়া পুলিশ তার জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আদালতে পাঠায়।
শিবগঞ্জ উপজেলার নন্দীপুর গ্রামের সামছুল আলমের ছেলে মোমিন ওরফে বাবু মণ্ডল ওরফে পিচ্চি বাবুর বিরুদ্ধে গত আড়াই বছরে ঢাকা থেকে বগুড়ায় ডেকে এনে পাঁচ নারীসহ সাতজনকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১৯ এপ্রিল ভোরে শিবগঞ্জে জ্ঞাতনামা এক কিশোরের লাশ উদ্ধার হয়। লাশ উদ্ধারের সংবাদে ঢাকার দক্ষিণখানের নিপা আক্তার নামের এক নারী তার বোনের ছেলে সুজনের (১৬) লাশ বলে শনাক্ত করেন। সুজন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ পিচ্চি বাবুর সন্ধান পায়। পরে গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল তার কথিত স্ত্রী নিপা আক্তারের সহায়তায় ১৯ এপ্রিল ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার একটি বাসা থেকে পিচ্চি বাবুকে গ্রেফতার করে।
এ সময় বাবুর সঙ্গে থাকা তার কথিত মা গাজীপুর জয়দেবপুর থানার বুরুলিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী পারুলকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে কিশোর সুজনকে হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ময়দানহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আইনুল হক (৪০), একই এলাকার সারোয়ার (৩৮) ও জলিলকে (৪০) পুলিশ গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, এক তরমুজ ব্যবসায়ীকে হত্যার মধ্য দিয়ে অন্ধকার জগতে পা বাড়ায় কুখ্যাত পিচ্চি বাবু।
পুলিশের অভিযোগ, গত আড়াই বছরে পিচ্চি বাবু এক কিশোর, পাঁচ কলগার্ল ও এক ব্যবসায়ীসহ সাত জনকে হত্যা করেছেন। তার নারী ব্যবসার কারণে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অসংখ্য কিশোরী ও তরুণী। হিরোইন, আফিম, স্বর্ণ, ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ নানা রকম অবৈধ ব্যবসা করে মালিক হয়েছেন কোটি টাকার।
তবে গ্রেফতারের পর বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে কেবলমাত্র দুই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বাবু।
পিচ্চি বাবুকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে আনার পর বুধবার দুপুরে তাকে নিয়ে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে জেলা পুলিশ। সংবাদ সম্মেলন শেষে জানান, তিনি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহব্বত নন্দীপুর গ্রামের মো. ছামছুল আলমের ছেলে। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০০৫ সালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার এক তরমুজ ব্যবসায়ীকে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গার আখ ক্ষেতে হত্যা করে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে অপরাধ জীবন শুরু হয় তার। এরপর টাকার নেশায় হিরোইন, আফিম, স্বর্ণ, ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ দেশ বিদেশে নানা রকম অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। মাঝে হঠাৎ হিরোইন ও স্বর্ণসহ ঢাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর এতোদিনের রোজগারের প্রায় অধিকাংশই খরচ হয়ে যায়।
এরপর মাঠে নামেন বিভিন্ন হোটেলে আগত সুন্দরী কিশোরী সংগ্রহে। তাদেরকে দেখিয়ে টাকার লোভ দেখিয়ে বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা শহরে চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া দিতেন তাদেরকে। তবে ভাড়া দেওয়া ওই সব মেয়ের কেউ যদি সময়মতো তার(বাবুর) কাছে ঘটনাস্থলের পরিস্থিতিসহ পুরো প্রতিবেদন দিতে কালক্ষেপণ করতেন অথবা সময়মতো তার কাছে ফেরত না আসতেন, তাহলেই খুনের নেশা পেয়ে বসতো তাকে।
এর আগে বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম জানান, বাবু অত্যন্ত চালাক ও ঠাণ্ডা মাথার খুনি। তার স্বার্থে যেকোনো মানুষকে স্বল্পতম সময়ে অনায়াসে খুনের পরিকল্পনা করতেন কিলার বাবু।
পুলিশ সুপার জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার একটি এলাকায় কয়েকটি খুনের ঘটনা তাকে ভাবিয়ে তোলে। হত্যাকারীদের ধরতে সার্বিক দিক নির্দেশনা দিয়ে বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি/এ-সাকের্ল) মোহাম্মদ নাজির আহম্মেদ খানের নেতৃত্বে শিবগঞ্জ থানার সুজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মজিবর রহমানসহ গোয়েন্দা(ডিবি) পুলিশের সমন্বয়ে একটি চৌকষ দল গঠন করে দেওয়া হয়।
শিবগঞ্জের কিশোর সুজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মজিবর রহমান জানান, সকলকে একই কায়দায় কাপড় বা ওড়না পেচিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করতেন বাবু। সুজন হত্যা মামলায় বাবুকে বুধবার জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। তবে আদালতের কাছে দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে কেবলমাত্র সুজন ও শাপলা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বাবু।