মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অতীতে জামায়াত নেতাদের রায় ঘোষণার দিন ও পরবর্তী সময়ে দলটি হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করলেও জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রায়ের দিন মঙ্গলবার তারা হরতাল দিচ্ছে না। জামায়াতের বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জামায়াত মনে করছে, ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের ঠিক আগের দিন নিজামীর রায় দেওয়া হচ্ছে। যাতে জামায়াত সহিংস আন্দোলনে যায়। আর এই নেতিবাচক দিক মোদি সরকারের কাছে উপস্থাপন করে ফায়দা নেবে সরকার। তাই সরকারের এই ফাঁদে পা দিচ্ছে না জামায়াত।
উল্লেখ্য, ২৫ জুন বুধবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন সুষমা স্বরাজ। এর আগের দিন মঙ্গলবার নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর আগে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। দলটির সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড এবং সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
পরে আপিল বিভাগের রায়ে ফাঁসি কার্যকর হয় কাদের মোল্লার। জামায়াতের এসব নেতার রায় ঘোষণার দিন ও পরবর্তী সময়ে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করে দলটি। মাওলানা সাঈদীর রায়ের পর সহিংসতায় সারাদেশে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ নিহত হন।
জামায়াত সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার নিজামীর রায়ের তারিখ ঘোষণার পর নতুন করে নড়েচড়ে বসেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠকে বসেন তারা। কিন্তু দলের সর্বোচ্চ নেতার রায়ের দিন কর্মসূচি দেওয়া হবে কিনা- এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। পরে রাতে আবারও বৈঠকে বসেন নেতারা।
বৈঠকে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা দিক উঠে আসে। বিশেষ করে বুধবার ভারতের মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। জামায়াত নেতারা মনে করেন, মূলত নিজামীর রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির আবারও সহিংস হয়ে উঠবে এবং এর ফায়দা নেবে সরকার। এ জন্যই নিজামীর রায়কে সামনে আনা হয়েছে। তাই ভারতের নতুন সরকারের কাছে জামায়াত নিয়ে কোনো ভুল মেসেজ না যায় এ জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে এগুচ্ছে দলটি। এক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহের মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতালের মতো কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না দলটি। সেক্ষেত্রে বুধবার সারাদেশে বিক্ষোভ এবং শুক্রবার দোয়া মাহফিলের মতো লঘু কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
তবে এ ব্যাপারে জামায়াতের একাধিক নেতার বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি।