বিজেপির ন্যাশনাল সেক্রেটারি শ্যাম জাজু স্বীকার করেননি যে, তার পার্টির সভাপতি অমিত শাহ ঢাকায় টেলিফোন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'বাংলাদেশে যেভাবে বলা হচ্ছে বিজেপি সেভাবে পরিচালিত হয় না।'
গতকাল ৯ জানুয়ারি শুক্রবার অপরাহ্নে নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে শাম জাজুর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ ও ওই প্রতিনিধি দলের নেতা শিতাংশু গুহ বেগম জিয়ার সঙ্গে অমিত শাহ'র ফোনালাপ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। তখন বিজেপি সেক্রেটারি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ওই বৈঠকের পর নয়াদিল্লি থেকে শিতাংশু গুহ টেলিফোনে নিউইয়র্কে (বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল) এনআরবি নিউজকে বলেন, 'শ্যাম জাজুসহ বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সাথে আলোচনায় আমি মনে করছি যে, অমিত শাহ আদৌ খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেননি। কারণ, এক পর্যায়ে শ্যাম জাজু আমাকে ওই প্রসঙ্গ রেখে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন।'
বৈঠকে আরো ছিলেন সুইডেন ঐক্য পরিষদের তরুন কান্তি চৌধুরী, রাশিয়া ঐক্য পরিষদের দেবনাথ প্রেমানন্দ, ফ্রান্সের স্বদেশ বড়ুয়া এবং উদয়ন বড়ুয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের ড. প্রজন্মলংকার ভিক্ষু, তুহিন চাকমা, সুমিত চৌধুরী এবং অভিষেক ভারদুয়াজ।
বৈঠকে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। হিন্দুদের যাতে পৈত্রিক ভিটেমাটি ছাড়তে না হয় সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কার্যকর আলোচনার অনুরোধ জানানো হয় শ্যাম জাজুকে। এ ব্যাপারে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয় তার কাছে।
উল্লেখ্য, বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ্’র সাথে সাক্ষাতের জন্যেই প্রতিনিধি দলটি দিল্লি গমন করেন। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে অমিত শাহ আগের দিনই উড়িষ্যায় চলে যান।
এ বৈঠকের পর নয়াদিল্লিতেই ভারতীয় হিন্দু পার্টির আন্তর্জাতিক হিন্দু সম্পর্কিত শীর্ষ নেতা স্বদেশ গুপ্তের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি দলটি।
বাংলাদেশের হিন্দুরা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন জেনে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ নিয়ে পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের সমন্বয়ে একটি সেল গঠন করা হবে। এ সময় তিনি ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারীদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবেন বলেও উল্লেখ করেন। এর আগেরদিন প্রতিনিধি দলটি সাক্ষাত করে শস্ত্রীয় শিখ সঙ্গীতের নেতা অভিনাশ যশোয়ালের সঙ্গে। সেখানেও বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়।
ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কংগ্রেস পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে একান্তে আলাপের উদ্ধৃতি দিয়ে শিতাংশু গুহ এনআরবি নিউজকে জানান, 'অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের প্রতি কংগ্রেসের চেয়েও বেশি দরদ বিজেপি সরকারের। ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ দমন এবং একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু করায় বিজেপির নীতি-নির্দ্ধারকরা অত্যন্ত খুশি।'
শিতাংশ গুহ বলেন, 'আমিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। কিন্তু মনে হয়েছে বিজেপির বড় নেতারা আরো বেশি সহনশীল বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বের প্রতি।'
প্রতিনিধি দলটি ৮ জানুয়ারি বৃস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেটে ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বিশ্ব বিবেককে সোচ্চার হওয়ার আহবানে অনুষ্ঠিত মঙ্গল প্রদীপ হাতে মানববন্ধনেও অংশ নেয়।
বিডি-প্রতিদিন/১০ জানুয়ারি ২০১৫/আহমেদ