আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি আজ। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এরপর ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
এক বছর সময়কালে সরকারকে ঘরে-বাইরে নানা সঙ্কট মোকাবেলা করতে হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। আর তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত চুক্তি রয়েছে প্রক্রিয়াধীন। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত মামলায় বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নেতৃত্বও এসেছে বর্তমান সরকারের হাত ধরে। সফলতা এসেছে তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতে। মুক্তিযুদ্ধের সনদ জালিয়াতি ও নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার ছিল সরকারের বড় অস্বস্তির জায়গা। তবে দ্রুত ব্যবস্থাও নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারের সহযোগী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটি অংশের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, সরকারের মন্ত্রী ও দলের শীর্ষ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ধর্মানূভূতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য সরকারকে বেশ বেগ পাওয়ায়।
সরকারের একটি বড় অর্জন হলো ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ), কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) নির্বাচনে বাংলাদেশের বিজয়। অর্জনের আরেকটি বড় ধাপ হলো নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর কাজ দৃশ্যমান করতে পারা। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিকে মোকাবেলা, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণ ও ১৪ দলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে পারা ও দলের দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা সরকারের বড় সাফল্য।
তবে দ্বিতীয় মেয়াদের শাসন ক্ষমতায় বসার পর এক বছরে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো সরকারকে অসুবিধার মধ্যে ফেলেছে বিভিন্ন সময়ে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের মারামারি, সংঘর্ষ ও সংঘাতে প্রাণহানির অনেক ঘটনা ঘটেছে। একটি চক্রের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রশ্নপত্র ফাঁস সরকারের শিক্ষা খাতের সাফল্য কিছুটা ম্লান করেছে। এসবের মধ্যেও সরকার ঠিক সময়ে বিনামূল্যের বই দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক। বিশেষ করে বছরের প্রথমদিকে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি সন্তোষজনক অবস্থায় ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল সারা বছরই। রফতানি আয় বেড়েছে। বিশ্ববাজারে টাকার মান ছিল স্থিতিশীল।
তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা সরকারের বড় সাফল্য। তবে পদ্মায় ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সুন্দরবনের শেলা নদীতে অয়েল ট্যাংকার ডুবি দুর্ঘটনায় উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতিও কোনো কাজে আসেনি।
গত এক বছরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সফলতা-ব্যর্থতা মিশ্রণে ভরা। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। অনেক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোরও অনেক দূর অগ্রগতি রয়েছে। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারের কয়েকটি বড় অর্জন রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলার রায় বড় ধরনের অর্জন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সফরের মাধ্যমে চীন, জাপান, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের সূচনা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি ও ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তি শেষের পর্যায়ে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১২ জানুয়ারি, ২০১৫/ রশিদা