আর কোন অবৈধ পথে নয়, বরং নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে আপন ঠিকানায় ফিরে গেল ১৫৫ বাংলাদেশি। আন্তর্জাতিক অভিভাসন সংস্থা (আইওএম) এর সহায়তায় শুক্রবার সকালে ফেরত পাঠানো হয়েছে মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা ১৪৬ জন বাংলাদেশিকে। এরআগে, বৃহস্পতিবার ৯ শিশুকে আদালতের নির্দেশে নিজ ঠিকানায় পৌঁছে দেয় রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি।
মিয়ানমার ফেরত এসব বাংলাদেশিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ৪০ জন, ঝিনাইদহের ১৩ জন, মাদারীপুরের ১৪ জন, কুষ্টিয়ার ৪ জন, মাগুরার ৬ জন, পাবনার ১২ জন, যশোরের ৮ জন, সিরাজগঞ্জের ২৬ জন, চুয়াডাঙ্গার ১১ জন, কুমিলার ৬ জন, জয়পুরহাটের ৫ জন, সুনামগঞ্জের ৮ জন ও সাতক্ষীরার ২ জন বাসিন্দা রয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অভিভাসন সংস্থা (আইওএম)’র কক্সবাজার অফিস প্রধান ও প্রেগ্রাম অফিসার আসিফ মুনির বলেন, ৩০ জুলাই আরও ১৫৯ জনকে আনার কথা রয়েছে। মিয়ানমারের সাথে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।
মিয়ানমার ফেরত সাইফুল ইসলাম জানান, ৫ মাস ধরে আমরা ঘরের বাইরে। আমাদের কুমিল্লার এক দালাল ফুসলিয়ে আমিসহ আরও পাঁচজনকে টেকনাফে নিয়ে আসে। প্রায় একমাস সাগরে ভাসমান ছিলাম। সাগর থেকে আমাদের উদ্ধার করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইদ্রিস নামে আরেকজন শপথ করে বলেন, জীবনেও আর ভুল করব না। পাড়ার সকলকে আমাদের করুন কাহিনী বলে সচেতন করব। একই কথা বলেন, আবু বক্কর ও নুরুল ইসলাম নামে আরও দুই যাত্রী। তাদের ভাষ্য হলো- মরণের পর আবার জীবন ফিরে পাওয়া অবস্থা। প্রায় দেড় মাস খাবার পায়নি। একলাখ টাকা নিয়ে আমাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর কথায় সাগরে আটকিয়ে রাখে।
এসব যাত্রীদের ফেরত পাঠানোর পূর্ব মুহূর্তে প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জানান, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিয়ামনার থেকে ফেরত আনা ১৫৫ বাংলাদেশিকে নিজ ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই ১৫৫ জন দেশের ১৪ জেলার বাসিন্দা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকালে ফেরত বাংলাদেশিরা ৭০ জন দালালের নাম উল্লেখ করেছেন। মানবপাচারের অভিযোগে ওই ৭০ দালালের ১৪টি জেলায় একটি করে মামলা দায়ের করা হবে।
এরআগে, গত বুধবার পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে ১৫৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। এরপর কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ডরমেটরিতে রাখা হয়। সেখানে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সকলের তথ্য যাচাই বাছাই শেষে শুক্রবার স্বজনের কাছে হস্তান্তর করে।
আন্তর্জাতিক অভিভাসন সংস্থা (আইওএম)’র কক্সবাজার অফিস প্রধান ও প্রেগ্রাম অফিসার আসিফ মুনির জানান, উদ্ধার হওয়া সকল অভিভাসীকে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া লোকজনও ভুল পথে পা দিবেনা বলে শপথ করছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত উদ্ধারকৃত সকল অভিভাসীকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। ঢাকা কিংবা নিজ জেলাভিত্তিক অনুষ্ঠানটি হতে পারে। উদ্ধারপ্রাপ্তদের কর্মসংস্থানের বিষয়ই অনুষ্ঠানে প্রাধান্য পাবে।
উল্লেখ্য, গত ২১ মে মিয়ানমার সমুদ্র উপকূল থেকে ২০৮ অভিভাবাসীকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে মিয়ানমার। এদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত ১৫০ জনকে ৮ জুন এবং ৩৭ জনকে ১৯ জুন ফেরত আনা হয়। এরপর ২৯ মে আরও ৭২৭ অভিবাসীকে উদ্ধার করে মিয়ানমার। সেখান থেকে ১৫৫ জনকে বাংলাদেশি হিসাবে শনাক্ত করা হয়। এদেরকে গত ২২ জুলাই বুধবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত আনা হয়। সীমান্তের ঘুমধুম জিরো পয়েন্টে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢেকুবনিয়া বিজিপি ক্যাম্পে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে এ বৈঠকটি হয়।
বিডি-প্রতিদিন/২৪ জুলাই, ২০১৫/মাহবুব